নির্দেশনার পরেও গায়েবি মামলা চালু রয়েছে: মাহবুব তালুকদার

নভেম্বর ২২ ২০১৮, ২৩:১১

Spread the love

নির্বাচনি কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহসহ পুলিশের বেশ কিছু কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।’ বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে বর্তমান ইসির মেয়াদে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোর উদাহরণ তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুনামের সঙ্গে করতে পারলেও বাকি ৫টির ক্ষেত্রে তা ছিল না।’ গাজীপুর ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে তিনি এ দুটি নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তুলে ধরেন ইসির তদন্তে উঠে আসা পুলিশ বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা। ওই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে সংসদ নির্বাচন কীভাবে সুন্দর করা যায় সেই পথ বের করার কথাও বলেন তিনি।

গায়েবি মামলা নিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘বর্তমানে বহুল আলোচিত গায়েবি মামলা এখন আর গায়েবি আওয়াজ নয়। হাইকোর্টও বলেছেন, এই ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। ঢাকা পুলিশ কমিশনার গায়েবি মামলা না করতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের মামলা চালু রয়েছে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সিডিউল ঘোষণার পূর্বে যে পুলিশ গায়েবি মামলা করেছে, সিডিউল ঘোষণার পর তার পক্ষে রাতারাতি পাল্টে গিয়ে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা কতটুকু সম্ভব?’ পুলিশ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।’

গায়েবি মামলা ইস্যুতে ইসিতে দেওয়া বিএনপির আবেদন প্রসঙ্গে মাহবুব তালকুদর বলেন, ‘কিছু সংখ্যক গায়েবি মামলার আসামির তালিকা বিরোধী দল থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। মামলাগুলো পুরনো হলেও এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির অনেকের আদালত থেকে জামিন নেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। কোনও কোনও সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা থাকার কারণে তারা প্রচারকাজ চালাতে ভয় পাচ্ছেন। এই ভীতি সর্বক্ষেত্রে অমূলক নয়। নির্বাচনি ব্যবস্থাপনাকে স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে প্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা প্রয়োজন।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘গ্রেফতারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, তা কোথাও প্রতিপালন হচ্ছে না। নির্দেশনাটিতে মানবিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার যে অভিব্যক্তি রয়েছে, তা প্রতিপালিত হলে পুলিশের আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা অনেকাংশে কমে যেতে পারতো।’ তিনি বলেন, ‘কমিশন আশ্বাস দিলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কার্যকর ছিল না। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে পুলিশের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। পুলিশ সবার সঙ্গে সমান আচরণ করলে তা সম্ভব হতে পারে।’
নির্বাচনি কর্মকর্তাদের তথ্য যাচাই প্রসঙ্গে এই ইসি বলেন, ‘নির্বাচন কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশ দুই মাস আগেই মাঠে নেমেছে। তারা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং কর্মকর্তাদের বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ধরনের তথ্যানুসন্ধানে পুলিশকে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কে কী উদ্দেশ্যে এসব কর্মকাণ্ড করছে, তা রহস্যজনক। অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্যদের এই কর্মকাণ্ডে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যার দায় কমিশনের ওপর এসে পড়ে।’

এবারের সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে এই কমিশনার বলেন, ‘শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসী আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। এই নির্বাচন আমাদের আত্মসম্মান সমুন্নত রাখার নির্বাচন। আমরা কোনোভাবেই এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দিতে পারি না। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর ওপর বর্তাবে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হলে আমরাও তার দায় এড়াতে পারবো না।’ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ইসি দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও