গায়েবি মামলাকারী পুলিশের পক্ষে কতটা নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব, প্রশ্ন মাহবুব তালুকদারের

নভেম্বর ২৩ ২০১৮, ১২:৩০

Spread the love

তফসিল ঘোষণার আগে যে পুলিশ গায়েবি মামলা করেছে, তফসিল ঘোষণার পরে তাদের পক্ষে রাতারাতি পাল্টে গিয়ে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন কতটা সম্ভব এই প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার

‘১৯৭০ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকার সময় তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। নির্বাচন বিষয়ে সেটাই ছিল আমার একমাত্র অভিজ্ঞতা। নির্বাচন কমিশনে যোগ দেয়ার পর সেই অভিজ্ঞতা দিনে দিনে ফুলে-পল্লবে পল্লবিত হয়েছে, একইসঙ্গে তাতে আছে কিছু কাঁটার আঘাত। আজ আপনাদের সঙ্গে তা শেয়ার করতে চাই।’
কথাগুলো নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের।
বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একটি বিশেষ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক, স্বরাষ্ট্র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও সব মহানগর পুলিশের কমিশনার, উপমহাপরিদর্শক ও সব জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)। কমিশনের পক্ষ থেকে ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) চার কমিশনার ও ইসি সচিব।
তাদের সবাইকে সামনে পেয়ে বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় জন্ম নেয়া ‘কিছু কাঁটার আঘাত’ তুলে ধরতে ভুললেন না মাহবুব তালুকদার।
মাহবুব তালুকদারের লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, অনিয়মের কারণে বরিশাল সিটি নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি), কিন্তু তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৭৯ জন প্রিজাইডিং অফিসারের একটি স্বাক্ষরবিহীন তালিকা রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠান গাজীপুরের জেলা প্রশাসক। এই দুই নির্বাচনের এ রকম অন্ধকার দিক উঠে আসে এই কমিশনারের আত্ম-বিশ্লেষণে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই দুই সিটির ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের দায়িত্বরত কর্মকতাদের কাছে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এই কমিশনার।
গাজীপুর ও বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে সভায় দেয়া মাহবুব তালুকদার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভায় লিখিত বক্তব্য রাখার খুব একটা রেওয়াজ নেই। কিন্তু আজ আমি আপনাদের সামনে ব্যতিক্রম হিসেবে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করছি।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমরা দুটো উল্লেখযোগ্য নির্বাচন শেষ করেছিলাম। একটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং অপরটি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই দুটো নির্বাচনে আমরা সুনামের সঙ্গে উতরে গেছি বলে অনুমান করতে পারি। কারণ এ দুটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ শোনা যায়নি। বলতে দ্বিধা নেই, এই দুটি নির্বাচনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনমানসে একটি আস্থার স্থান তৈরি করে নিতে পেরেছে।
পরবর্তী সময়ে খুলনা গাজীপুর বরিশাল রাজশাহী ও সিলেট যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। আমি খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে কোনো কথা বলব না। তবে যেহেতু আমি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একক দায়িত্বে ছিলাম, সেহেতু এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে অনুরোধ জানান। ‘গাজীপর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ‘স্বরূপ সন্ধান’ শিরোনামে আমি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তাকে সমর্পণ করি। অজ্ঞাত কারণে সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে আত্ম-বিশ্লেষণের তাগিদেই আমি গাজীপুর ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন দুটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন যে, কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নয়, কারও দায়িত্ব পালন অবমূল্যায়ন করার জন্য নয়, বিষয়গুলো উপস্থাপনা করতে হচ্ছে, পূর্বের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে পেতে এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনুরূপ সমস্যা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেই পথ সুগম করতেই এই আলোচনা।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও