বাণিজ্য মেলায় শেষ মূহুর্তে জমজমাট, মূল্য ছাড়ের হিরিক,ক্রেতারা বলছেন ছাড়ের নামে প্রতারণা

ফেব্রুয়ারি ১৬ ২০২৪, ২০:৩১

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ “গেট পেরুলেই শুরু হাঁকডাক। আসেন ভাই, আসেন আপা, খালা, মামা। আমাদের স্টলে আসুন, আমাদের প্যাভিলিয়নে আসেন। এখানে উন্নতমানে পণ্য সামগ্রি সুলভ মুল্যে পাওয়া যায়। এরকম হাঁকডাক আর চেচামেচিতে জ¦ালাপালা পুরা মেলা প্রাঙ্গন। দেখে মনে হয় এ যেন ফুটপাতের হকারের হাট।” কতাগুলো বলছিলেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থী মনি ইসলাম বলেন, মেলার সামনে উচ্চশব্দে গান বাজছে। আবার নানা বিজ্ঞাপনের উচ্চশব্দে অতিষ্ঠ হচ্ছি। শুধু তাই নয়, প্রায় প্রতিটি স্টলের সামনেই গুলিস্তানের ফুটপাতের মতো হাত টেনে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে যা বিব্রতকর।

শেষ দিকে জমজমাট হলেও শুরুর দিকে মেলা ছিল একেবারে ফাঁকা। এবার শুরু থেকেই ক্রেতাশূন্যতায় ভুগছিল পূর্বাচলে আয়োজিত এই বাণিজ্য মেলায়। শেষ দিকে এসে জমজমাট বাণিজ্য মেলা। মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতাদের নানা হাঁকডাক ও ক্রেতাদের পদচারণায় জমজমাট চারদিক।

কথা হয় মেলায় আচার নিয়ে আসা শাহজাদার সঙ্গে। তিনি বলেন, শেষ মুহুর্তে এসে ভালই ক্রেতা পাচ্ছি। বিক্রিও ভাল হচ্ছে। মূলত শীতের তীব্রতা কমার পর থেকেই ক্রেতা দর্শনার্থী বাড়তে থাকে।
কথা হয় কলেজ পড়–য়া আফসানা মিমির সাথে। তিনি বলেন, বাসায় গ্যাস–সংকটের কারণে বিদ্যুৎ–চালিত চুলা (ইনডাকশন) কিনতে এসেছেন। কিন্তু মেলায় চুলার দাম বেশি বলে মূল্যছাড়ে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি–পাতিল কিনছেন।

তবে পণ্যের দাম বেশি রাখার অভিযোগ মানতে নারাজ দেশের একটি খ্যাতনামা গ্রুপ অব কোম্পানির প্যাভিলিয়নের দায়িত্বে থাকা এহতেশাম মনির। তিনি বলেন, ‘মেলার পজিশনভাড়া, প্যাভিলিয়ন তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের পর মুনাফা করতে যে পরিমাণ বিক্রি প্রয়োজন, বিক্রি তার চেয়ে অনেক কম। ফলে আমরা এখনো ছাড় দিচ্ছি না। সে কারণে অনেকের দাম বেশি মনে হতে পারে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার কেনাবেচা তেমন নেই। তাই বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
মেলায় বস্ত্র খাতের স্টলগুলোতে ১০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়ে বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এসব স্টল সাধারণ বাজারে যা দাম আছে পণ্যের গায়ে তার চেয়ে বেশি লিখে তা থেকে মনমতো ছাড় লিখে রেখেছে।

কথা হয় দেশীয় পণ্যের সেøাগান দেয়া প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের সহকারী প্রধান (কর্পোরেট এন্ড সেল) আনোয়ার কবীর কাননের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতের মেলা শেষে গরমের দিন চলে আসছে। লোকজন আমাদের কাছ থেকে এবার ফ্যান ও এসিই বেশি ক্রয় করছেন। তাছাড়া আমরা ছাড় দেয়া শুরু করেছি। ফলে ভালো সাড়া পাচ্ছি।

স্থানীয় ক্রেতা দর্শনার্থীদেও অভিযোগ, বাজারে যেমন দাম তার চেয়ে দিগুন দাম বেশি মেলায়। আবার ছাড়ের কথা বললেও এ ছাড় শুধু স্টিকারে আর তাদের মুখে মুখে।

মেলায় হুরের প্যাভিলিয়নে ছাড় দেওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০%। হুরের হেড অব সেলস রমজান মজুমদার বলেন, সাধারণত আমরা মেহেরের এ ড্রেসটি পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করে থাকি। মেলা উপলক্ষ্যে ছাড় দিয়ে এটা তিন হাজার টাকায় বিক্রি করছি।

ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডের মধ্যে যমুনা মিলিয়ন ৫০ থেকে ৬০% পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। এদিকে মিনিস্টার তাদের কিছু পণ্যে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। আর ভিসতা ইলেকট্রনিক ৩৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করছে ৮৬ ইঞ্চি টেলিভিশন। অন্যান্য টেলিভিশনেও ন্যূনতম ২০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

আমজাদ হোসেন বলেন, শেষ দিকে বাণিজ্যমেলায় এলে ছাড়ে পণ্য কেনা যায়। এজন্য বিশেষ আগ্রহ নিয়েই প্রতি বছর মেলায় আসি। এবার ছাড় দিচ্ছে কিন্তু তবু দাম বেশি মনে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার পরিচালক ও ইপিবি সচিব বিবেক সরকার বলেন, মেলার ব্যবসায়ীরা কি ধরনের ছাড় দিচ্ছে বা না দিচ্ছে সেটা তাদেও নিজস্ব বিষয়। কোন অভিযোগ থাকলে মেলায় ভোক্তা অধিকার রয়েছে। সেখানে অভিযোগ করেন আইনি সহায়তা পাবেন।

ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা বিকাল চন্দ্র দাশ বলেন, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে ছাড় নিয়ে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও