আমাকে ও আমার পরিবারকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছেঃশেখ হাসিনা
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি আমাদের নেতাকর্মীদের এবং দেশবাসীকে স্মরণ করাতে চাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী তাদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। ওই চক্রান্তের সঙ্গে খন্দকার মোশতাক যেমন জড়িত, সেই সঙ্গে জিয়াউর রহমান গংরাও জড়িত। জিয়াউর রহমান জড়িত এই কারণে, খন্দকার মোশতাক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমানকে তার সেনাবাহিনী প্রধান করে। আবার জিয়াউর রহমানই সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, একটা পরিবারকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছে, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, পুরস্কৃত করে এবং তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেটা তো খুনি কর্নেল রশিদ ফারুক বিবিসির ইন্টারভিউতে খুব স্পষ্টভাবে বলেছে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খুনিদের যে সম্পর্ক ছিল এটা তো আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
খালেদা জিয়া-তারেক রহমানও জড়িত
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই ২১ গ্রেনেড হামলা ঘটায় এবং এর সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত। সেটা তো যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত তাদের কথাতেই বের হয়ে এসেছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘এক একটা ঘটনা ঘটাবার আগে খালেদা জিয়া যে বক্তৃতাগুলো দিয়েছে, কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল, তার আগে বলেছিল আওয়ামী লীগ একশ বছরেরও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে খালেদা জিয়ার বক্তৃতা ছিল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনদিন হতে পারবে না। এই ভবিষ্যৎবাণী খালেদা জিয়া কীভাবে দিয়েছিল? কারণ তাদের চক্রান্তই ছিল আমাকে তারা হত্যা করে ফেলবে। তাহলে তো আমি আর কিছুই হতে পারবো না। এটাই তাদের চক্রান্ত ছিল। এখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। আপনারা জানেন, আমেরিকায় আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে কিডন্যাপ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। সেটা ধরা পড়েছে, আমেরিকায় এফবিআই তাদের তদন্তে জানিয়েছে।’
সরকারি মদদে গ্রেনেড হামলা
২১ আগস্ট সেদিন পরপর কয়েকটা গ্রেনেড হামলার ঘটনার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে দুভার্গ্য, বিএনপি সরকার যদি এর সঙ্গে জড়িত নাই থাকবে তাহলে তারা আলামতগুলি কেন নষ্ট করলো? ওই গ্রেনেড হামলার পরেই তারা সিটি করোপারেশেনের মেয়র তার লোকজন নিয়ে এসে পুরো এলাকা ধুয়ে ফেলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪ সালে তৎকালিন সরকারের মদদেই ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। সেদিন আহতদের সাহায্য করার বদলে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কেন সেদিন তারা এটা করেছিল? এত বড় একটা ঘটনা, অথচ সে সময় সংসদে আমাদের কথা বলতে দেয়নি। তখন পার্লামেন্টে যিনি সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী, সে তখন বলে দিল ওনাকে আবার কে মারবে। তখন তো বলতেই হয় যে আপনিই তো মারবেন। চেষ্টা করেছেন ব্যর্থ হয়েছেন সেজন্য আর পারছেন না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ’২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতোই বহুবার বিভিন্ন হামলার শিকার হয়েছি আমি। কিন্তু এরকম ভয়াবহ হামলা, তারপরেও বেঁচে আছি। নিশ্চিয়ই আল্লাহ রেখে দিয়েছেন কিছু কাজ সেটা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত হয়তো কাজ করে যেতে পারবো। আল্লাহ সেই সুযোগ দেবেন। আমি সেটুকুই চাই, সেই কাজটুকু করে যাবো। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।’.
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন গ্রেনেড হামলাটা হলো, সাধারণ একটা সভ্য দেশ হলে কী করতো? সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এবং অন্যান্য সবাই ছুটে আসতো আহতদের সাহায্য করতে, উদ্ধার করতে, চিকিৎসা দিতে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সেখানে কোনও রোগী যেতে পারে নাই। চিকিৎসা নিতে পারে নাই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বিএনপির সে সমস্ত ডাক্তার তারা কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল না। যাদের ডিউটি ছিল, তারাও নাই, কারণ তারা আহতদের চিকিৎসা করবে না। আমাদের যারা ডাক্তার ছিল তারা ছুটে গিয়েছিল, তারা সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে কত হাসপাতাল কত ক্লিনিক আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সেটা জানতে পারি। সমগ্র ঢাকা শহর ছড়িয়ে ছিল আমাদের নেতাকর্মী। মিছিলে যারা দূরে ছিল তারা তখন ছুটে আসে এবং যারা বেঁচে যায় আহতের হাসপাতালে নিতে যায় তখন পুলিশ লাঠি চার্জ করলো। এসব করা হয়েছিল যাতে সেদিন ওই হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে ওই জায়গা ত্যাগ করতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করার জন্য। কাজেই সরকারের মদদ না থাকলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হতে পারে না। সন্ত্রাসীদের এক জায়গায় করা, তাদের ট্রেনিং দেওয়া, পরবর্তীতে তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ। তাদের ধারণা ছিল আমি মারা গেছি। যখন শুনলো মারা যাইনি, ওই রাতের বেলায় চার জনকে দেশ থেকে পালাবার সুযোগ করে দেয়। আসলে খুন-খারাবি তাদের অভ্যাস। এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না।’
ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে কিডন্যাপ করে হত্যার চেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এফবিআই যখন এটা তদন্ত করে সেখানে বিএনপির নেতা দোষী সাব্যস্ত হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়। সেখানে যে রায় দেয় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান এবং শফিক রেহমান তাদের নাম বেরিয়ে এসেছে। যে তারা এর সঙ্গে জড়িত। যে শাস্তি পায় সে যে তারেক জিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল, এটা আমরা কখনও জানতে পারতাম না যদি এফবিআই এটা খুঁজে বের না করতো।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।