দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে আদিবাসী কড়া সম্প্রদায়
এনামুল মবিন(সবুজ)দিনাজপুরঃ দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা হালজাই ঝিনাইকুড়ি গ্রামে বসবাস ‘কড়া’ সম্প্রদায়ের। বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে ‘কড়া’ একটি আদিবাসী গোষ্ঠী। নিজস্ব ধারার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করে এ গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে বৈচিত্র্যময় জীবন। বর্তমানে দেশে হারিয়ে যেতে বসেছে আদিবাসী কড়া সম্প্রদায়টি।
‘কড়া’ অর্থটি হচ্ছে মাটি খোঁড়া। আদিবাসীদের এমন নামকরণের কারণ হচ্ছে কোনো এক সময় দিঘি খননের সঙ্গে যুক্ত ছিল এই আদিবাসী সম্প্রদায়টি।
ইংরেজদের আমলে ভারত জুড়ে রেললাইন বসেছে বিভিন্ন জায়গায় । পাহাড় কেটে, মাটি খুঁড়ে সেই রেললাইন বসানোর কাজে ঘাম ঝরিয়েছে এই আদিবাসীরাই। মূলত রেল লাইনের কাজের সূত্র ধরেই ভারতের ঝাড়খ- থেকে এদের আগমন ঘটে এ অঞ্চলে।
এদেশে ‘কড়া’ আদিবাসীদের একমাত্র গ্রামটি বিরল উপজেলার হালজাই মৌজায়। এখানে বাস করে ১৮ টি পরিবার। এছাড়া বৈরাগীপাড়ায় একটি এবং সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙার খাড়িপাড়ায় রয়েছে আরো দু’টি ‘কড়া’ পরিবার। হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশে আদিবাসী ‘কড়া’ সম্প্রদায়। দেশে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় এ সম্প্রদায়ের লোকদেরকে নানান সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী ভারতে। এ কারণে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে কড়া সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করলেও এখন তা কমে এসেছে মাত্র ১৮টি পরিবারে। প্রাচীন জনপদে বাংলাদেশে রয়েছে আদিবাসীদের নানান সম্প্রদায়। এই সমতল ভূমির আদিবাসী সম্প্রদায়দের মধ্যে রয়েছে তুরি, ভুনজার,ওরাও,মাহালি,পাহাড়, মুন্ডা, মুসহর,সাঁওতাল ও কড়া সম্প্রদায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে ‘কড়া’ সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে শুধুমাত্র দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা বিরলের হালজাই গ্রামেই। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও এই ১৮টি পরিবার এখনো রয়েছে এই দেশের মাটিতে।কষ্টের মধ্যে বসবাসরত সম্প্রদায়ের লোকজন জানিয়েছেন তাদের দুর্দশার কাহিনী। বন-জঙ্গলের সাথে তাদের জীবিকার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বন-জঙ্গলের পরিমাণ কমে আসায় এ সম্প্রদায়ের লোকজন পড়েছে চরম সংকটে। তাছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের কাজে না নেওয়ায় তারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে এদের বিয়ের রেওয়াজ না থাকায় যে কয়টি পরিবার বসবাস করছে তাদের সন্তানদের বিয়ে নিয়ে তাদের রয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। শুধু সামাজিক বন্ধন নয়, দেশে সার্বজনীন শিক্ষার কথা বলা হলেও এ সম্প্রদায়ের শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এসব সমস্যার মধ্যে ও ‘কড়া’ সম্প্রদায়ের লোকজন বর্ণনা করেছেন তাদের অতীত সোনালী দিনগুলোর কথা।
ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায় গুলো যেন দেশ থেকে বিলুপ্ত না হয়ে যায় সে ব্যাপারে সরকার সহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সমাজ গবেষকরা। বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায় বসবাসের এই দেশ থেকে যাতে প্রাচীন এই ‘কড়া’ সম্প্রদায়টি নিশ্চিহ্ন হয়ে না যায় সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। এমনটিই প্রত্যাশা করছেন সকলের।