১৫ বছর পর বিএমঅ্যান্ডডিসি বুঝলো রাফিয়া হাসপাতালের মালিকের সনদ জাল

জুলাই ০৭ ২০২১, ১২:২৫

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃ ১৫ বছর পর বিএমঅ্যান্ডডিসি বুঝতে পারলো কেরানীগঞ্জের আটিবাজার রাফিয়া হাসপাতালের মালিক ওয়াহিদুজ্জামান(৪৬) জাল ডাক্তারি সনদ ব্যবহার করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে রোগীদের সঙ্গে ভয়ংকর প্রতারণা করতেছেন।

অতঃপর গত বুধবার ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল'(বিএমঅ্যান্ডডিসি) মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান-এর-ডাক্তারি সনদ নকল ঘোষণার পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছে।

বিএমঅ্যান্ডডিসি এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাশিয়ার ‘দ্য সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট মেডিকেল একাডেমি’ থেকে ডাক্তারি পাশ করার যে সনদ দিয়ে তিনি বাংলাদেশে চিকিৎসা পেশা শুরু করার অনুমোদন নিয়েছিলেন সেটি ভুয়া। যা ৩০ জুনের বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়। ২০০৬ সালের ১৬ মে ভুয়া সনদ দিয়ে তিনি চিকিৎসা পেশার অনুমোদন নেন। তার বিএমঅ্যান্ডডিসি এর অনুমোদনের নম্বর ছিলো ‘এ-৪২৫৭২’

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার বাস্তা ইউনিয়নের বাঘাসুর গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে ভুয়া ডাক্তার মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান আটিবাজারে ২০০৬ সাল থেকে ভাড়া ভবনে ‘রাফিয়া ক্লিনিক’ পরিচালনা করে আসছিলেন। পাশাপাশি নিজেকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা করতেন। গত তিন বছর আগে আটিবাজার মাঠের পাশে নিজের কেনা জমিতে নতুন ভবন নির্মাণ করে তাতে পুরাতন রাফিয়া ক্লিনিক স্থানান্তর করেন। বর্তমানে যার নাম রাফিয়া হাসপাতাল। সেখানে ডাক্তার বাদে ৩০ জনের মতো স্টাফ ও নার্স কর্মরত রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ওয়াহিদুজ্জামান এর সাথে কথা বলতে গেলে তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এ সময় তার ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘রাফিয়া হাসপাতালে’র একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ওয়াহিদুজ্জামান রোগী দেখার চাইতে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেশি পালন করতেন। গত ৩০ জুন সকালে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে চলে গেছেন। তবে বিএমঅ্যান্ডডিসি এর ঘোষণার পর তার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।

ওয়াহিদুজ্জামান এর ওপর আনিত অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্যার বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে চিকিৎসা পেশায় ফিরবেন নতুবা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কখনই চিকিৎসা পেশায় ফিরবেন না।

হাসপাতালের সম্প্রতি পরিস্থিতি সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এখানে তিন জন চিকিৎসক রয়েছে পাশাপাশি একজন চিকিৎসক সপ্তাহে তিনদিন রোগী দেখছেন। এছাড়া রয়েছে ৩০ জন নার্স স্টাফ। এই ক্লিনিকের মালিকপক্ষে স্যার সহ তিনজন।

মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, ২০১৫ সালে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁর ক্লিনিকে ঢুকে তাকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিলো। তখন তিনি বলেছিলেন সময় মতো ডাক্তারি সার্টিফিকেট দেখাতে না পারায় শুধু শুধু জরিমানা করেছে। তার সার্টিফিকেট নাকি বাসায় ছিল। ডাক্তার সাহেবকে আমরা খুব ভালো মানুষ হিসেবে জানতাম। কিন্তু ওনার এমন প্রতারণার খবর বিশ্বাস করতে পারছি না। দীর্ঘ দিন যাবত তিনি আটিবাজারে ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। আমারও অনেক সময় রাফিয়া ক্লিনিকে তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। শুনেছি তিনি অনেক টাকার মালিক হয়ে গিয়েছেন। আটিবাজারে তার নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এ সময় স্থানীয়রা ভুয়া ডাক্তার ওয়াহিদুজ্জামানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, ডাক্তারি পেশার মতো একটি মহান পেশার নামে ওয়াহিদুজ্জামান মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ইতোমধ্যে বিএমঅ্যান্ডডিসি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরাও তার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এবিষয় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও