দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদের বিপরীতে মন্ত্রী গাজীর ঋণ রয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা

ডিসেম্বর ১০ ২০২৩, ১৫:৩৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রূপগঞ্জ আসনে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতিপূর্বে এ আসনেই তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে আরও তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তিনবার বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

শিল্পগোষ্ঠী গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীর বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে, যেগুলো তার আয়ের উৎস। নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী স্নাতক (বিএসসি) পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি। রূপগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্পদ ও ঋণ গত পনেরো বছরে সমান তালে বেড়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে বর্তমানে তিনি প্রায় ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার মালিক। এ সম্পদের বিপরীতে তার ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গোলাম দস্তগীরের দেনা ১ হাজার ২২ কোটি টাকা। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তার হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে এবারের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত পনেরো বছরে গোলাম দস্তগীরের সম্পদ বেড়েছে ২৫ গুণ। তবে সম্পদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ১৫ বছরে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ২১ গুণ। গত ১৫ বছরে গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রী রূপগঞ্জের তারাব

পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজীর অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা হয়েছে। ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৬২ লাখ। হাসিনার কাছে থাকা স্বর্ণালংকারের দাম দেখানো হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। গোলাম দস্তগীর গাজীর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকার বেশি হলেও তাদের কাছে মাত্র ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সোনা আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী এর পরিমাণ দেড় ভরিরও কম। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের গাজী টায়ারস, গাজী ট্যাংকস, গাজী কমিউনিকেশনসহ গাজী গ্রæপের ১০টি পৃথক প্রতিষ্ঠান, একটি ব্যাংক, একটি টেলিভিশন চ্যানেল ও একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাবদ আয় করতেন। ভবন ভাড়া, ব্যবসা, বোনাস শেয়ার, সংসদ সদস্য বাবদ প্রাপ্ত ভাতা, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের লভ্যাংশ ও বোর্ড মিটিং বাবদ বছরে ৭ কোটি ৬৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আয় করতেন। এখন তিনি ভবনের ভাড়া, ব্যবসা, বিনিয়োগের লভ্যাংশ ও সংসদ সদস্য ভাতা বাবদ বছরে ৮৩ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। এ হিসেবে ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। পনেরো বছর আগে গোলাম দস্তগীরের নগদ ৯৪ লাখ ১২ হাজার টাকা, ১৬ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যাংক জমা, সাড়ে ৪ কোটি টাকার কোম্পানি শেয়ার, ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার যানবাহনসহ মোট ৪৫ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। স্থাবর সম্পদ ছিল ১১ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার।

স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে মোট ৫৭ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার সম্পদ ছিল। তবে এবারের হলফনামা থেকে জানা যায়, পনেরো বছর পর নগদ ৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ৬১ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে জমা, ২২ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার, ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার যানবাহনসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ৮৬ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। অকৃষি জমি ও ভবন বাবদ তার স্থাবর সম্পদ আছে ১০৭ কোটি ৩১ লাখ টাকার।

বর্তমানে স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার সম্পদ আছে পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর। ২০০৮ সালের তুলনায় যা ২৫ গুণ বেশি। গোলাম দস্তগীরের সম্পদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তালে বেড়েছে ঋণও। ২০০৮ সালে তার ব্যাংক ঋণ ছিল ৪৩ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। বর্তমানে তার ব্যাংক ঋণ ৯৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ হিবেবে পাটমন্ত্রীর ঋণ বেড়েছে ২১ গুণ।

বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও ঋণ বৃদ্ধির বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেন, গত পনেরো বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য আমাকে ঋণ নিতে হয়েছে। তবে কখনোই ঋণখেলাপি হইনি। রূপগঞ্জ আসনে এবারের নির্বাচনে জেলার অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্ব হিসেবে রয়েছেন আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এ আসনে প্রার্থী হয়ে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। তাই এবারের নির্বাচনে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও