বর্ষায় কদর বাড়ে ছাতা মেরামত কারিগরদের

জুন ২৭ ২০২৫, ১১:৫৮

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে, ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’। হ্যাঁ, পঞ্জিকার পাতা অনুযায়ী এখন বর্ষাকাল। যদিও এখন রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা চলছে। বছরের অনেকটা সময়জুরে ঘরের কোনেই থাকে পড়ে। হয়তো কোথায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। আধুনিক কালে ফোল্ড করে আলমারি বা ওর্য়াড্রবেও রাখা যায়। হ্যাঁ, ছাতার কথাই বলছি। চীন সর্বপ্রথম ছাতা আবিস্কার করে রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে। পরবর্তী সময়ে রোদ থেকে রক্ষার পাশাপাশি বৃষ্টি থেকেও রক্ষা পেতে ব্যবহার হচ্ছে ছাতা।

মুড়াপাড়া বাজারে ছাতা সারাতে এসেছেন আলী আজগর মিয়া। তিনি বলেন, বর্ষায় ছাতা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। হাটে বাজারে, মাঠে ঘাটে সব জায়গাতে যেতেই ছাতা লাগে। রতন মিয়া বলেন, ছাত্র পড়াই , বৃষ্টির দিনে ছাতা ছাড়া উপায় নাই। কিন্তু ছাতা মেরামত করতে বেশি টাকা নিচ্ছেন কারিগররা। আর নতুন ছাতার দাম তো আকাশচুম্বী। ছাতা মেরামতের কারিগররা বলেন, সব কিছুরই তো দাম বাড়ছে, যন্ত্রপাতি দামে কিনতে হয়, তাই দাম একটু বেশিইমনে হয়।

চলছে বর্ষাকাল। বর্ষাকালের প্রকৃতির মূল উপাদান হচ্ছে বৃষ্টি। আর এ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘরের বাইরে চলাচলের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে ছাতা। তাই কেউ কিনছেন নতুন ছাতা, আবার কেউ পুরাতন ছাতা মেরামত করছেন। বর্তমানে ছাতা মেরামত কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই। বছরের পুরো সময়টা বসে থাকলেও এই সময়টায় ছাতার কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কার ছাতা কে আগে মেরামত করে নিবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে যেমন ছাতার ব্যবহার বাড়ে, তেমনি কারিগরদের কাজ এবং রেটও বাড়ে। বর্ষায় ছাতা ঠিক না থাকলে পথ চলাই দায়।

মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ ছাতা হাতেই ঘর থেকে বের হন। বৃষ্টির সময় ছাতা মাথায বের হলেও রোদ উঠলে ছাতা নেয়ার কথা অনেকেরই মনে থাকে না। ছাতা হারিয়ে ফেলেন কেউ কেউ। ছাতা হারিয়ে যাক আর না-ই যাক, বৃষ্টিতে ছাতার আর্কষণ মানব জীবনে থাকবেই । ছাতা নামের ওই বস্তুটি বর্ষায় হাতে না নিলেই নয়। বারিধারার দিন এসেই গেছে। এর মধ্যেই গ্রামের মেঠোপথে ছাতার মেরামতের কারিগরদের হাঁক ডাক শোনা যাচ্ছে। আ ..ছে ছেঁড়া..ফাড়া, কলপি ভাঙ্গা… বাঁকা, স্প্রিং নষ্ট, লাঠি.. ভাঙ্গা.. ছা..তা। টনক নড়ে গৃহস্ত কিষাণ চাষী মজুরদের।

কখন বৃষ্টি নামবে কেউ জানেনা। আকাশে কালো মেঘ দেখলেই বলাবলি শুরু হয়ে যায় এই বুঝি আকাশটা ছিদ্র হইয়্যা নামল বৃষ্টি। এ সময় ছাতা ঠিক না থাকলে কি আর চলে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রূপগঞ্জের ভাঙ্গাচোরা রাস্তাগুলোতে হাঁটু পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। বেড়ে যায় যানবাহনের ভাড়া। ভোগান্তির শেষ থাকে না। তখন মনে হয় বড় জলজটের মধ্যে ডুব সাঁতার দিয়ে বাড়ি পৌছাই ভাল। এমন অবস্থায় একমাত্র সাহায্যকারী বস্তুটির নাম ছাতা।

গ্রামের পথ ও হাটবাজার ছাড়াও ছাতা মেরাতমকারীরা পাড়া-মহল্লার রাস্তার পাশেও বসে থাকে। আবার অনেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে- আছে ভাঙ্গাচোরা ছাতা, ছাতা সারাই বলে হাঁক যাকতে থাকে। ছাতা আধুনিক কালে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ছাতা যত দৃষ্টি নন্দনই হোক না কেন মেলতে না পারলে, ভেতরের কোনো র্পাটস নষ্ট বা সেলাই খুলে গেলে, মেলতে অসুবিধা হলে কারিগর ছাড়া কোনো গতি নাই। তাদের ব্যাগে ছাতা সারাইয়ের যন্ত্র থাকেই। সুঁই-সুতো, ছোট্ট হাঁতুড়ি, সাঁড়াশির সঙ্গে টুকরো কাপড়, ছাতার ভেতরের রিং-স্পোক, কাঁটা গুনাসহ কত রঙের জিনিষই থাকে।

মিজান মিয়া নামের একজন ছাতা মেরামত কারী বলেন, ছাতা মেরামত করার সময় কোনো জিনিস ফেলে দেয়া হয় না। নতুন করে পাল্টে নেয়ার পর ওই ভাঙ্গা টুকরো রেখে দেয়া হয়। যাদের ছাতায় সামান্য খুঁত আছে সেখানে তা বসিয়ে দেয়া হয়। এরা এতটাই এক্সর্পাট যে ছাতার যে কোনো অংশ দ্রুত মেরামত করে দিতে পারে। বর্ষাকাল চলে গেলে কিছুদিনের জন্যে ছাতার কদর ফুঁরিয়ে যায়। প্রকৃতিতে যেই বৃষ্টি ঝরার পালা শুরু হয়, তখনই খোঁজ নেয়া হয় কোথায় আছে বৃষ্টির বন্ধু ছাতাটি। ছাতার বহুবিদ ব্যবহার আছে। একটা সময় গল্প উপন্যাসে চলচিত্রে গ্রামের মানুষের চরিত্র চিত্রনে ছাতাকে টেনে আনা হতো। চামচারা ছাতা মেলে ধরত প্রভাবশালী মোড়ল, মাতব্বরদের মাথার উপর।

গৃহস্থ ও কিষাণিরা গ্রীস্ম বর্ষায় ছাতা ছাড়া ঘর থেকে বের হন না। ছাতা এখনও মর্যদার প্রতীক। ছাতা হাতে গ্রামের স্কুেলর মাস্টার মশাইয়ের পথচলা এখনও থামেনি। একটা সময় পায়জামা পাঞ্জাবী পড়া ঘটকের হাতে বা বগলের নিচে ছাতা থাকতই। নতুন জামাই বর যাত্রায় ছাতা ব্যবহার করতো। নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধে পছন্দের তালিকায় ছাতা থাকতো শীর্ষে। গ্রীস্মের খরতাপের দুপুরে, বৃষ্টির ধারা থেকে মুক্তির ছোট্ট একটি বস্তুর প্রয়োজনটা যে কত বড় তা মৌসুম ছাড়া বুঝা যায় না। ###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও