মনে কি থাকবে একুশ শতকের এ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা

এপ্রিল ১৮ ২০২০, ১৭:০০

Spread the love

নাঈম ইসলাম:
কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়াই পুরো বিশ্বকে আজ অচল করে দিয়েছে করোনা নামক একটি ভাইরাস ।কেউ কেউ আবার ৩য় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও বড় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন। তবে এই ভাইরাসটির প্রতিকার না মিললে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাসহ অনেক প্রাণহানির আশংকাই যেন তারিয়ে বেরাচ্ছে সকলকে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২১ লক্ষের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫৩৮৩১ মানুষ মারা গেছে ।চীনের উহান শহর থেকে বিস্তার লাভ করা এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটির মহামারী ব্যাধী থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও।বাংলাদেশে এপর্যন্ত মোট ২১৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৮৪ জন মারা গেছে।
এরি মধ্যে করোনায় পুরো দেশ ঝুঁকিপুর্ন বলে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।দেশকে করোনা থেকে মুক্ত রাখার জন্য দেশের সকল সরকারি -বেসরকারি অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণাসহ অঘোষিত লক ডাউন করে সবাইকে নিরাপদে নিজ গৃহে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছেন সরকার।কেননা ঘরে অবস্থান করলেই করোনা থেকে মুক্তি মিলবে।
আপনি আমি ঘরে অবস্থান করলেও করোনা যুদ্ধের ময়দানে ডক্টর,পুলিশ,সেনাবাহিনী ও সাংবাদিকসহ জরুরী কাজের সেবা প্রদানকারী লড়াকু এ সৈনিকেরা লড়ে যাচ্ছেন করোনার বিরুদ্ধে।একুশ শতকের এ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ডক্টর মঈন নামে এক চিকিৎসক এরি মধ্যে শহীদ হয়েছেন।এ যুদ্ধে ডক্টর,পুলিশ,সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়ার খবর ও পাওয়া গেছে অনেক।হয়তো করোনা যুদ্ধে একদিন আমরাই জয়ী হবো,করোনা নামক ভাইরাস থেকে অসুস্থ পৃথিবীর মুক্তি একদিন মিলবেই।তবে কি মনে থাকবে এই ক্রান্তিলগ্নের বীর যোদ্ধাদের কথা!
যারা কিনা দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য জীবন ঝুঁকি নিয়ে করোনা যুদ্ধে শপথ নিয়েছেন দেশকে করোনা মুক্ত করার।হয়তো দেশের এই ক্রান্তিলগ্নের যোদ্ধারাই হবে একুশ শতকের মুক্তিযোদ্ধা,থেকে যাবেন মানুষের হৃদয়ে।

এইতো সেদিন মগবাজার মোড়ে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম।হটাৎ একটি টহল পুলিশের গাড়ি এসে থামালো আমাদের চায়ের দোকানের একটু দূরেই। এসময় পাশে থাকা এক ভদ্রলোক একটু আড়ভাবেই টহলরত পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্য করে একটু কথা বল্লেন।এরকম অনেকের চোখেই সমালোচনার পাত্র ছিল পুলিশ ভাইয়েরা।হয়তো সবাই ই একটু আড়চোখে দেখতেন দেশের ক্রান্তিলগ্নের এই বীরদের।
এইতো কিছুদিন আগেই আপনার আশেপাশে কত বন্ধু কত শুভাকাঙ্খী কত আপনজন ছিলো।আর আপনি যখন এ ক্রান্তিলগ্নে না খেয়ে আছেন নিজের অর্থায়নে আপনার ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তারাই,আপনাকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন তারাই,আপনাকে করোনা থেকে মুক্ত রাখার জন্য ঘরের মধ্যে রেখে বাহিরে কাজ করে যাচ্ছেন তারাই।এমনকি আপনি মারা গেলে আপনার দাফনের কাজটাও তারাই করছেন।বন্ধু হিসেবে বন্ধুর লাশ কাধে তুলে নিচ্ছেন তারা।অথচ আপনার এই শেষ কৃত্যেও কাছে নেই আপনার বন্ধু, শুভাকাঙ্খী ও আপনজন।

কিছুদিন আগেও যাঁদের দেখা গিয়েছিল মানুষের সমালোচনার,গালির পাত্র, তাঁরাই এখন দেশের ত্রাতার ভূমিকায়। রোগীদের বাঁচাতে রক্ত দিচ্ছেন, খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন গরিবের কাছে,ভবঘুরে, ফুটপাথবাসীদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, গরিব ও পরিয়ায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসছেন চাল, ডাল। দেশের অনেক এলাকায় লোকে লকডাউনের তোয়াক্কা না করে বেরিয়ে পড়ছেন, তাঁদের সচেতন করার জন্য গানও গাইছেন তারা।

সাংবাদিকদের হলুদ,লাল,নীল ক্যাটাগরিতে ভাগ করার সেই মানুষগুলোও জীবনের ও পরিবারের ঝুঁকি নিয়ে করোনাসহ দেশের সব খবর পৌঁছে দিচ্ছে আপনাদের কাছে।

ডক্টরদের কসাই নামে যাদের ট্যাগ লাগিয়েছিলেন তারাই আজ পরিবার ছেরে জীবনের ঝুঁকি নিয় করোনা রুগীর সেবা করে যাচ্ছে দিন-রাত্রি।

এছাড়াও সেনাবাহিনী,র‍্যাববাহিনী,ব্যাংকারসহ জরুরী সেবাদানে নিয়োজিত সকলেই আপনার আমার সুরক্ষা নিশ্চিতে করোনা যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন নিজের জীবনবাজি রেখে।
আপনি আমিও এই যোদ্ধাদের সাথে সামিল হতে পারি ঘরে অবস্থান করে।আপনার আমার আর এই বীরদের প্রচেষ্টায় অসুস্থ পৃথিবীর মুক্তি একদিন মিলবেই।
আসুন আগামীর সুস্থ পৃথিবী ফিরে পাওয়ার প্রত্যয়ে অতীতের সব কিছু ভুলে নতুন পৃথিবীকে নতুন রুপে সাজিয়ে মানুষ হিসাবে একে অন্যের ভেদাভেদ ভুলে কাধে কাধ রেখে এগিয়ে নিয়ে যাবো আগামীর পৃথিবীটাকে।এটাই হোক এ অসুস্থ পৃথিবীকে মুক্ত করে সুস্থ পৃথিবী কামনার মূলমন্ত্র।
একইসাথে সুস্থ পৃথিবী গড়ে তুলতে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে নিজে সুস্থ থাকি,দেশকে সুস্থ রাখি আর একুশ শতকের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে সামিল হয়ে করোনা মুক্ত একটি পৃথিবী উপহার দেই।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও