উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্কুল শিক্ষক উভয় পদের বেতন তোলেন রেহানা

জানুয়ারি ০৫ ২০২১, ২৩:১৯

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃউপজেলা পরিষদে নির্বাচিত হলে চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তোলার সুযোগ নেই। উপজেলা পরিষদ আইনে এ বিষয়ে পরিষ্কার করে নির্দেশনাও দেয়া আছে।

উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (৩০ জুন ২০০৯ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুসারে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে আইনত কোনো বাধা নেই। তবে এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের ১৫-০১-১৯৮৬ তারিখে জারিকৃত নির্দেশনা মানতে হবে।

সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অথবা অন্য কোনো শিক্ষক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইলে সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরি হইতে পদত্যাগ না করিয়া সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের নিকট থেকে বিনা বেতনে ছুটি মঞ্জুর সাপেক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল খাকতে পারবেন। এই নির্দেশনাটি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বেলায়ও প্রযোজ্য হইবে।’

তবে সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নয় বছর ধরে স্কুলের বেতন তুলে নিচ্ছেন তিন মেয়াদে নির্বাচিত বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান মোছাঃ রেহানা বেগম।

দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল লতিফ হাওলাদার সম্প্রতি রেহানার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।আইন না মেনে অনৈতিকভাবে রাজস্ব তহবিল ও স্কুল থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করার দায়ে রেহানা বেগমের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪২০/৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫(২) দুটি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে।

সদর উপজেলার কাগাশুরা মাধমিক বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের সহকারী শিক্ষক রেহানা বেগম ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক বছরের জন্য পদত্যাগ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে জয় পেয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি।

ভাইস চেয়ানম্যান পদে নির্বাচিত হলে রেহানা বেগম ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ২৭ জুলাই ২০১১ পর্যন্ত দুই বছরের জন্য বিনা বেতনে ছুটি নেন। ছুটি মঞ্জুর সাপেক্ষে বিদ্যালয়টি থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫৯৬ টাকা উত্তোলন করেন। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের উপজেলা নির্বাচনেও একই পদে নির্বাচিত হন রেহানা বেগম।

তবে সেই ছুটি মঞ্জুর না করেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০১১ সালের ২৮ জুলাই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে বহাল থাকেন। এরপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে বিদ্যালয়ের সরকারি ও বেসরকারি বেতন ভাতা বাবদ ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ১৭৩ টাকা উত্তোলন করেন। একই সঙ্গে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে ২০১১-২০১৯ পর্যন্ত ১৯ লাখ ২০ হাজার ৪৬৮ টাকা উত্তোলন করেন।

সূত্র জানায়, রেহানা বেগম উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থেকে বেআইনিভাবে রাজস্ব তহবিল হতে ১৯ লাখ ২০ হাজার ৪৬৮ সম্মানীভাতা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেন। আবার একই সময়ে স্কুল থেকেও সরকারি-বেসরকারি বেতন ভাতা বাবদ ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ১৭৩ টাকা উত্তোলন করে আত্মাসাৎ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেহানা বেগম বলেন, ‘আমি দুই জায়গা থেকেই বেতন নিচ্ছি, এটা বৈধ। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। সেখান থেকে আমার বেতন নেয়াকে বৈধ বলেছে।’

এ বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে দুদকে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার আর কোনো তথ্য নেয়ার থাকলে দুদকে জিজ্ঞেস করেন। দুই জায়গা থেকেই বেতন পাবো সেটাই আমার অধিকার।’

উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (৩০ জুন ২০০৯ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুসারে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে আইনত কোনো বাধা নেই। তবে এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের ১৫-০১-১৯৮৬ তারিখে জারিকৃত নির্দেশনা মানতে হবে।

সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অথবা অন্য কোনো শিক্ষক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইলে সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরি হইতে পদত্যাগ না করিয়া সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের নিকট থেকে বিনা বেতনে ছুটি মঞ্জুর সাপেক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল খাকতে পারবেন। এই নির্দেশনাটি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বেলায়ও প্রযোজ্য হইবে।’

 

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও