রূপগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাটার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা

ফেব্রুয়ারি ০৯ ২০২১, ১৮:৩২

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ চলতি মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার পরেও সজনে ডাটা গাছ মুকলিত হয়ে ধবধবে সাদা ফুলে ভরে গেছে। ডালের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফুল আর ফুল। এ সময় সজিনা গাছের পাতা ঝরে পড়ে। তাই পাতা শুন্য ডালে থোকা থোকা সাদা ফুলের শোভা দেখে সকলেই মহিত হয়। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টি গুন অনেক বেশি। এ গাছের অনেক গুন থাকায়, এ গাছকে যাদুর গাছও বলা হয়ে থাকে। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভত্তা করে ও বড়া ভেজে খাওয়া যায়। ফল সবজির মতো রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাটার ব্যাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ২৫-৩০ হাজার সজিনা গাছ আছে। প্রতি বাড়িতে কমপক্ষে ৩/৪ টি গাছ রয়েছে। এসব গাছ বাড়ির পাশে ও ক্ষেতের আইলে লাগানো। গাছে ফলনও বেশি হয়। যতœ ছাড়াই এসব গাছ বেড়ে উঠেছে। দেশে ২টি জাত আছে সজিনা ও বাজিনা। সজিনার ফুল আসে জানুয়ারীতে আর বাজনে ফুল আসে মার্চ মাস থেকে। তবে সব ফুল থেকে ফল হয় না। একটি থোকায় সর্বাধিক ১৫০টি মত ফুল ধরে। ফুল ৪০ সে. মি. থেকে ৮০ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ফুটার ২ মাস পর ফল তোলা যায়। একটি বড় গাছে ৪০০ থেকে ৫০০ ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০-৪০ টি বীজ হয়। দেশে সাধারণ ডাল কেটে ডাল রোপন করে সজিনা গাছ লাগানো হয়।
তরকারি হিসেবে সজনের জুড়ি নাই, তাইতো এর কদর রয়েছে সর্বত্র। সমগ্র দেশে সজনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় সজনে চাষিদের মুখে হাসি। উপজেলার আনাচে-কানাচে, গ্রামে-গঞ্জে সবখানে গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে সজনে ফুল ধরেছে। স্থানীয় হাট-বাজারে সজনে ডাটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মুখরোচক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনে ডাটা স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি হয়। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকার টিটুর ৩টি গাছে এবার প্রচুর সাজনা হবে বলে আশা করছেন। গতবারের চেয়ে এবার সজনে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে তিনি ধারনা করছেন। অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনে ডাটা পুষ্টিগুণ ও স্বাদে বেশি হওয়ায় যে কোন বয়সের মানুষ সজনে খেতে ভালোবাসে। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসক নুর জাহান আরা খাতুনের মতে, সজনে সবজিতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ, আয়রণসহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন এবিসি সমৃদ্ধ সজনে ডাটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীরের পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে বলে সজনে ডাটা ওষুধি সবজি হিসেবেও ব্যাপক সমাদৃত। এছাড়া সজনে গাছের ছাল এবং পাতা রক্তামাশয়, পেটের পিরা ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, সজিনার মৌসুম শেষে এ বছরও ডাল রোপন করা হবে। সজিনা চাষিরা উচ্চ মূল্য পাওয়ায় সজনের ডাল রোপন করতে উৎসাহিত হচ্ছে। বসতবাড়ির আশে পাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজিনা গাছ যতœ ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজিনা পুষ্টি ও ভেজষ গুনে ভরা সবজি হিসাবে খুব দামী। সজিনার ব্যাপক চাহিদা ও উচ্চ মুল্যে বিক্রি হওয়ায়।

সজনে ডাটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতি বছরে তিন থেকে চার বার পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এর নাম বলা হয় বাজনা। অন্য প্রজাতির সজনে বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে একবারই পাওয়া যায়। সজনে চাষের জন্য বিশেষ কোন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় না। এর জন্য আলাদা কোন জমিও প্রয়োজন হয় না। যে কোন পতিত জমি, পুকুর পাড়, রাস্তার বা বাঁধের ধার, বাড়ির আঙ্গিনা এমনকি শহরে যে কোন ফাঁকা শুষ্ক জায়গায় সজনে গাছ লাগানো যায়। এর কোন বীজ বা চারাও প্রয়োজন হয় না। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই সজনে গাছ জন্মায়। এর জন্য কোন সার বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অবহেলা অযতেœ প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠে সজনে গাছ। বড় ও মাঝারি ধরণের এক একটি সজনে গাছে ৬ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। পতিত জমি, রাস্তার ধার, বাড়ির আঙ্গিনা বা শহরে বাসা বাড়ির আনাচে-কানাচে সজনে ডাটার ডাল লাগিয়ে অনেকেই বাড়ির চাহিদা মিটিয়েও বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বিনা খরচে অধিক আয় পাওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবেও সজনে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে এই উপজেলার মাটি, পানি ও আবহাওয়া সজনে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এই উপজেলায় সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে সজনে উৎপাদন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নুর বলেন, অলৌকিক গাছ সজিনা। ঠান্ডা-গরম, লবণ, খরা সহিষ্ণু এ গাছ বাংলাদেশের সর্বত্রই জন্ম নেয়। এ উপজেলার মাটিতে সজিনা আবাদ ভাল হচ্ছে। উপজেলার প্রতি বাড়িতে কমবেশি ৫/৬টি করে সজিনা গাছ আছে। এ বছর সজিনা গাছে ব্যাপক ফুল ধরেছে। বড় ধরণের দূর্যোগ না হলে সজিনার বাম্পার ফলন আশা করা যায়। প্রতি বছর উপজেলায় সজিনা গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকরা সজনের উচ্চমূল্য পাওয়ায় তারা লাভবানও হচ্ছে। এখানে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যাথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ফলে এই উপজেলায় অনেকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুর বাগানের মত এখন সজনে ডাটার বাগান করতে শুরু করেছে। এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার কৃষাণীদের কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও