মহালয়ায় শুরু দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা

অক্টোবর ০৯ ২০১৮, ১১:৩৭

Spread the love

মহালয়ার মধ্য দিয়ে সোমবার শুরু হল হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।

পুরোহিতের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ, আবহ সঙ্গীত, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে দেবীকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বলা হয়, মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হল দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গার আগমণের ক্ষণগণনা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী যুগান্তরকে জানান, হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।

শারদীয় দুর্গাপূজা শুরুর ছয় দিন আগে হয় মহালয়া। আর দেবীপক্ষের শুরু হয় মহালয়ার মাধ্যমে। এর আগের পক্ষ হল পিতৃপক্ষ। এ পক্ষে ভক্তরা তাদের পূর্বপূরুষের আত্মার শান্তির জন্য অন্ন-জল নিবেদন করেন। শাস্ত্রে একে বলা হয় তর্পণ। জানা গেছে, সোমবার ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সারা দেশে শুরু হয় মহালয়ার আচার-অনুষ্ঠান।

ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মাধ্যমে শুরু হয় মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমে চণ্ডীপাঠ করে আহ্বান জানানো হয় দেবীকে। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজা করা হয়। এছাড়া সারা দিন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় মহালয়া।

গুলশান-বনানী সার্বজনীন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সংলগ্ন বনানী পূজামণ্ডপে আগমনী উৎসবের আয়োজন করা হয়। বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মহালয়া অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করেন।

অনুষ্ঠানে চণ্ডীপাঠ করেন শ্রী প্রমোদ দত্ত। দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় হবে দেবী দুর্গার বোধন। ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে পূজার মূল আচার অনুষ্ঠান শুরু হবে। ১৬ অক্টোবর সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের পর শুরু হবে মহাসপ্তমীর পূজা।

১৭ অক্টোবর মহাঅষ্টমী পূজা, সেদিন হবে সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে হবে কুমারী পূজা। ১৮ অক্টোবর সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে মহানবমী পূজা। ১৯ অক্টোবর সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত যুগান্তরকে জানান, এবার সারা দেশে ৩০ হাজার ২৫৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এবার মণ্ডপ বেড়েছে ৮৬৩টি। ঢাকা মহানগরে এবার ২৩৪টি মণ্ডপে পূজা হবে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২২৯টি।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আরেক পুরোহিত মিলন চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, মহালয়ার প্রাক-সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়নী মুনির কন্যা রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গা আসছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে, যাবেন দোলায় (পালকি) চেপে।

শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী ঘোড়ায় চড়ে এলে তার ফল হয় ‘ছত্রভঙ্গসরঙ্গম’, অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার প্রকাশ পাবে। রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর প্রভাব বাড়বে।

আর দেবী দোলায় চেপে বিদায় নিলে ফল হয় ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’। অর্থাৎ, দেখা দেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও