রূপগঞ্জে ঈদের বাজার রমরমা,করোনার ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা রূপগঞ্জের ব্যবসায়িদের

এপ্রিল ২৯ ২০২২, ১৪:৩৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ অবশেষে জমে উঠেছে রূপগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেট, ফ্যাশনহাউজ, শপিংমলসহ হাটবাজারগুলো। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারসহ মার্কেটগুলোতে। বেচাকিনি জমে উঠাতে বিক্রেতারাও খুশি। করোনার ক্ষতি পুষিতে উঠতে পারলে আরো খুশি হবেন বলে জানান বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ, মার্কেটের দোকানীরা। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, দাম একটু বেশি। তবে সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে।

দুই বছরের করোনার স্থবিরতা কাটিয়ে এ বছর রমজানের শুরু থেকেই বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। আর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ভিড় বাড়ছে। এবার বেচাকেনায় ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি। এবারের ঈদে বেশি বিক্রি হচ্ছে পুষ্পা শাড়ি, শারারা, গারারা থ্রিপিস, পার্টি ড্রেস, জর্জেট, ফ্লোর টাচ, কুর্তি, ওয়ানপিস, টুপিস ও থ্রিপিস। এগুলো বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়।

এ ছাড়া পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৬০০ থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে মটকা ছয় হাজার টাকা, সিল্ক তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা, কাবলি পাঞ্জাবি এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, অ্যান্ডি কটন/অ্যান্ডি সিল্ক ছয় হাজার টাকা, রাজশাহী সিল্ক তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার বাজারে দেশী থ্রিপিস ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা, জর্জেট থ্রিপিস ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা, লেহেঙ্গা তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, দেশী সুতি টাঙ্গাইল শাড়ি ৬৫০ থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

যমুনা ক্লোথের কাপড় ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, এবারের ঈদে পুষ্পা রাজ ও শারারা নামের যে ড্রেসগুলো বের হয়েছে সেগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে। এবারের পুরো ঈদ বাজার জুড়ে পুষ্পা ও শারারা থ্রি-পিসের ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে।

রোজার ঈদকে সামনে রেখে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা-গাউছিয়া মার্কেটে পণ্য বেচাকেনা বাড়ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, গাউছিয়া মার্কেটে এখন প্রতিদিন হাজারো খুচরা ব্যবসায়ী ভিড় করছেন। তাদের পদচারণায় মুখর প্রতিটি দোকান। ফলে এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের দম ফেলার সুযোগ নেই। গত দুই বছর করোনার কারণে যে লোকসান হয়েছে, এবার বিক্রির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। পণ্যের দাম বেশির বিষয়ে এসব পাইকারি ব্যবসায়ীর দাবি, সুতা ও কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে কাপড় উৎপাদনে ব্যয় বাড়ায় বাধ্য হয়ে বেশি নিতে হচ্ছে।
ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটগুলো। অধিকাংশ মার্কেটে সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। প্রতিটি মার্কেটে তরুণীদের ভিড় একটু বেশি। উপজেলার কয়েকটি মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, এবারও ঈদের পোশাকে ভারতীয় চলচ্চিত্র ভিত্তিক পোশাকের আধিপত্য চলছে। অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে দেশী পোশাকের তুলনায় বিদেশী পোশাকের দিকেই ক্রেতাদের মনোযোগ বেশি।

এবার ঈদের বাজারে এসেছে হিন্দী চলচ্চিত্রের নামে একাধিক পোশাক। জরি, পুঁতিতে জড়ানো পাতলা চিকচিকে জমকালো টিস্যু কাপড়ের দুপাশে ঝুলানো জামাটিতে রয়েছে একটি বাড়তি কটি। ওড়নার সঙ্গে মিল করে জরির কাজ করা সালোয়ার। পোশাকটির নাম ‘টিস্যু গ্রাউন’। মুড়াপাড়া বাজারের ফুলকলি শপিংমলে কথা হয় ছোট্ট মাইশা মনির সাথে। আদো আদো কণ্ঠে মাইশা মনি জানায়, মায়ের সঙ্গে শপিং করতে এসেছে সে। জামা কিনবে। দোকানিরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে ছোট সোনামণিদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ‘টিস্যু গ্রাউন’।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা এলাকা থেকে আগত ক্রেতারা গাউছিয়া মার্কেট থেকে পাইকারী দরে ক্রয় করছেন যাকাতের শাড়ী, লুঙ্গী। এখানে চাহিদা মোতাবেক শাড়ী লুঙ্গী থাকায় এবং পাইকারী দরে পাওয়ায় ক্রেতারা ঝুকছেন এ মার্কেটে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে এ বেচাকেনা। দোকানীরাও ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদামত শাড়ী, লুঙ্গী দোকানে উঠিয়েছে। ক্রেতাদের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যাবস্থা। এছাড়াও পুরুষ ব্যাবসায়ীদের পাশাপাশি মহিলা কাপড় ব্যাবসায়ীরা হাজার হাজার পিছ শাড়ী, লুঙ্গীসহ কাপড় পাইকারী দরে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলা এলাকায় খুচরা বিক্রি করছে। শাড়ী, লুঙ্গীর পাশাপাশি ক্রয় করছেন পাঞ্জাবী, বেডসিট, ছোটদের ঝিলিক, সোহানা, আইপিয়েল, লেহেঙ্গাসহ হরেক রকম রেডিমেট কাপড়।

তবে শাড়ী দোকান গুলোতে দেখা গেছে বিত্তশালীদে ভীড়। ঐতিহ্যবাহী নোয়াপাড়ার জামদানি, জর্জেট কাতান, এসকে জর্জেট,সিমার জর্জেট, স্পিরিং কাতান, টাঙ্গাইলের বালুরচুরি ও রাজশাহী সিল্কের চাহিদা বেশী।

নগরপাড়া মার্কেটের ব্যবসায়ী সফিক মিয়া বলেন, এবছর শিশুদের পোশাকের চাহিদাটা একটু বেশি। তাছাড়া লকডাউনের কারণে পহেলা রমজান থেকে এবার বেচাকেনা শুরু করা যায়নি। মার্কেট খুলে দেয়ার পর থেকেই দোকানগুলোকে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করছি, চাঁদ রাত পর্যন্ত ভালো বেচাবিক্রি হবে। মারিয়া ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার মো. সফিউল্লা বলেন, মহামারী করোনায় সারা বছরই ব্যবসা ছিল মন্দা। মেয়েদের পোশাকে এবার নতুন চমক নিয়ে এসেছে ‘গারারা’।

ক্রেতারা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। তবে কেনাকাটা এখনো খুব একটা জমেনি। ‘গারারা’ নামের পোশাকটি দৃষ্টি কাড়ছে তরুণীদের। টিস্যু গ্রাউন ছাড়াও ‘গারারা’ নামের ভারতীয় ঢংয়ের ড্রেস রয়েছে। কাতান কাপড়ের ওপরের তৈরি করা জামাটার ওপরের পার্ট কামিজ-যা ঝুলে ছোট। সালোয়ার ঢোলা যার হাঁটুর দিকে ঘোরানো জরি চুমকির কাজ করা। ওড়নায়ও ভারী কাজ। এ পোশাকটি এবারের ঈদে ছোটদের পছন্দের পোশাক। ১ বছর থেকে ১২ বছর বয়সের বাচ্চাদের এই পোশাকটি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকায়।

এদিকে গার্মেন্টসসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বেতন ভাতা না দেয়ার কারনে তারা এখনও ঈদ পন্য ক্রয় করতে পারেনি। ফকিরখালীর খুচরা মহিলা কাপড় ব্যাবসায়ী হাজেরা খাতুন বলেন, ভাই গাউছিয়া মার্কেটে মোকাম করতে আইতাম প্রতি মঙ্গলবারে। ঈদে বেছাকিনা ভালা বইলা আজও মোকাম করতাছি। লিপি বেনারশি শাড়ী বিতানের মালিক দুলাল মিয়া জানান, শাড়ীর দোকানে বেচাকেনা ভাল। তবে যাকাতের শাড়ী ও লুঙ্গীর চাহিদা বেশী।

ফ্যাশন টাচের মালিক মোক্তার হোসেন জানান, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পোষাকের চাহিদা বেশি রয়েছে। তবে ক্রেতারা নতুন নতুন ডিজাইনের উপড় ঝুকছে। তবে বেচাকেনা ভাল আছে। তিনি আরো বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বেতন পায়নি। পেলে বেচাকেনা আরো বেড়ে যাবে। জুতা ব্যাবসায়ী রফিক জানান, জুতার বেচাকেনা আছে মোটামোটি। গাউছিয়া কর্পোরেশনের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া দিপু বলেন, মার্কেটে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যাবস্থা রয়েছে। ক্রেতারা নিরাপদে ঈদ পণ্য ক্রয় করছেন। এছাড়া উপজেলার তারাব, রূপসী, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, ভোলাব, হাটাব, বেলদীসহ ছোট ছোট হাটবাজারের দোকান গুলোতেও চলছে বেচাকেনা। এ বেচাকেনা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও