রূপগঞ্জে ড্রাগ লাইসেন্স, ফার্মাসিস্ট ছাড়াই ফার্মেসির ছড়াছড়ি, দেখার যেন কেউ নাই

সেপ্টেম্বর ১৫ ২০২২, ১৩:৫১

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ ড্রাগ লাইসেন্স নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ, অনুমোদনহীন ও মানহীন ভুয়া কোম্পানির ঔষুধের ছড়াছড়ি। এমন নানা অভিযোগ নিয়েই চলছে রূপগঞ্জের অধিকাংশ ফার্মেসি। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় ড্রাগ লাইসেন্স, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাড়াই অলি-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ওষুধের দোকান। সরকারি রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এন্টিবায়েটিকসহ সকল ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে মানুষের জীবন রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে।

ওষুধ প্রশাসনের সূত্রমতে, রূপগঞ্জ উপজেলায় ৩৭১টি ফার্মেসি রয়েছে। এর বাহিরে বিনা লাইসেন্স ও শিক্ষাগত যোগ্যতাবিহীন ফার্মেসিস্ট ছাড়াই কয়েক হাজার ফার্মেসি গড়ে উঠেছে। লাইসেন্সধারী বেশিরভাগ ফার্মেসিগুলোর ড্রাগ লাইসেন্স থাকলেও এক তৃতীংশ লাইসেন্স পুনরায় নবায়ন করা হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রোগীদের মানসম্পন্ন ঔষুধ পাওয়ার এবং ঔষুধের যৌক্তিক ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে ফার্মেসি এবং ঔষুধের দোকান স্থাপন ও পরিচালনার জন্য নির্দেশিকা রয়েছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মডেল ফার্মেসিতে (লেভেল-১) কমপক্ষে একজন ¯œাতক ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্ট থাকবেন, তাকে সাহায্য করবেন বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ফার্মাসিস্ট। মডেল মেডিসিন শপে (লেভেল-২) থাকবেন কমপক্ষে ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট। বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ফার্মাসিস্ট তাকে সহায়তা করবেন। প্রশিক্ষণ নেই এমন কেউ ফার্মেসি বা ঔষুধের দোকানে ঔষুধ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না, এমন কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে।

ঔষধ প্রশাসনের কড়া নির্দেশনা থাকলেও সরজমিনে উপজেলার একাধিক ফার্মেসিতে ঘুরে ভিন্ন এক চিত্র দেখা যায়, ডিগ্রিধারী, ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে হাজারও ফার্মেসি। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এসব ফার্মেসি থেকে বিক্রি হচ্ছে ঔষুধ। প্রতিটি হাসপাতালের আশে পাশে প্রায় অর্ধশতাধিক ফার্মেসি গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে অধিকাংশ ফার্মেসিগুলোতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ছারপত্র নেই। এছাড়া শহরে বড় বড় ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স থাকলেও সেখানে নেই দক্ষ ফার্মাসিস্ট। কোনো ধরনের কেমিস্ট বা ফার্মাসিস্ট না থাকলেও সব ধরনের রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব ফার্মেসিতে প্রায়ই ছোট ছোট অপারেশনও করানো হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঔষুধ কোম্পানী থেকে ধারে ঔষধ ক্রয়ের সুযোগ থাকায় অল্প পুঁজিতেও ব্যবসা করতে পারছে ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধার্থে জনবহুল বিভিন্ন এলাকাগুলোতে খুব সহজেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন ফার্মেসী। অধিক লাভের আশায় মুনাফালোভী ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা নকল ঔষধ বিক্রি করেন। যেসব ঔষধের চাহিদা বেশি থাকে সেসব ঔষধের নকল উৎপাদন বেশি হয়। বিভিন্ন ভিটামিন সিরাপ ও ট্যাবলেট, গ্যাস্ট্রিক রোগের সেকলো, লোসেকটিল, নেক্সাম সহ এন্টবায়োটিক রোগের জিম্যাক্স, ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট অস্টোক্যাল ডি নামের ঔষধ গুলোর চাহিদা ব্যাপক। বাড়তি চাহিদা থাকায় অধিকাংশ ফার্মেসিতে এসব ঔষধের নকল ঔষধ বিক্রি করা হয়।

প্রকৃত ঔষধের প্রতি পাতায় মুনাফা ৩-৫ টাকা সেখানে নকল ঔষধে মুনাফা হয় ২০-২৫ টাকা।একাধিক ফার্মাসিস্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মফস্বলের ফার্মেসিগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে তদারকির কোন ভয় নেই। যে যার যার ইচ্ছেমতো ঔষধের ব্যবসা পরিচালনা করছে। শহরে মাঝে মধ্যে পরিদর্শন ও ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা হলেও গ্রামে তদারকির কার্যকর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের আবাসিক ডা. নাজমুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, আমরা প্রায়ই প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানিয়েছি লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এই অভিযানের পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। মানুষের মাঝে ভয় নাই। আমরা একাধিক বার এই বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। বিভিন্ন সভায় বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি। আমরা চাই অনুমোদনহীন নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নি¤œমানের ঔষুধ বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে যেন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও