গ্যাস বিদ্যুৎ সঙ্কটে ধ্বংসের পথে শিল্প কারখানা

অক্টোবর ২৪ ২০২২, ১৩:২৬

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখনঃ গ্যাস বিদ্যুৎ সংকটে ধ্বংস হওয়ার পথে শিল্প কারখানা। শিল্প খাতের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, কোথাও কোথাও দিনে ১২ ঘণ্টা গ্যাস বিদ্যুৎ থাকছে না। আবার গ্যাস থাকলেও চাপ থাকছে না। এ কারণে ৬০ শতাংশ টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা থাকলেও তা পূরণ হচ্ছে না। বর্তমানে সুতার উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে পড়ায় তাদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল অক্টোবরে সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতি হবে, নভেম্বরে আরও উন্নতি হবে; ডিসেম্বরে সংকট থাকবে না। কিন্তু এখন অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বস্তুত টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা চতুর্মুখী সংকটে রয়েছেন। একদিকে অর্ডার সংকট। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপ। গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বাড়ছে। দিনের উল্লেখযোগ্য সময় কারখানা চালু রাখা সম্ভব না হলেও শ্রমিকদের নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব কারণে ইতোমধ্যে অনেক কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের টেক্সটাইল খাতের লক্ষ্য পূরণ হবে কী করে?

লোডশেডিংয়ের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আবাসিক এলাকার জনজীবনও। শিল্প-কারখানার মালিকরা তেলচালিত জেনারেটরে কারখানা চালানোর চেষ্টা করছেন। এতে তাদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। এভাবেও শতভাগ উৎপাদন করতে পারছেন না। লোডশেডিং চলতে থাকলে শিল্প-কারখানাগুলো সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন রূপগঞ্জের শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীরা।
কারখানাগুলো শতভাগ উৎপাদনের লক্ষ্যে তেল এবং গ্যাস ব্যবহার করে জেনারেটরের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েও হিমশিম খাচ্ছে। গ্যাসের সংকটের কারণে জেনারেটর চালাতে গিয়ে তাদের ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস বোতলজাত করে এনে জেনারেটর সচল করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫০ ভাগ খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

একটি প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুতের লোডশিংয়ের কারণে কারখানা সচল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। গ্যাসের প্রেসার একদম কম। এখন সিএনজি স্টেশন থেকে বোতলে করে গ্যাস কিনে এনে পাইপে সংযোগ দিই। পরে প্রেসার বাড়িয়ে জেনারেটর চালিয়ে কারখানা সচল রাখছি। তাও মাঝে মাঝে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।’

গোলাকান্দাইল এলাকার জুনায়েত ফ্যাশন গার্মেন্টসের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমার কারখানায় টি-শার্ট তৈরি হয়। শুধু বিদ্যুতের ওপর নির্ভর কারখানাটি। দিনে অন্তত ১২ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। কারখানায় নিয়োজিত প্রায় ৩০০ শ্রমিক বিদ্যুৎ না থাকলে বসে সময় কাটায়। আগের তুলনায় এখন টি-শার্ট উৎপাদন অর্ধেকে চলে এসেছে। শ্রমিকদের পুরো বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমি লোকসানের মুখে রয়েছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গ্যাসের মাধ্যমে জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। আবার গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় সময়ই ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এভাবে প্রতি মাসে এক কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। তারপরও প্রায় ২০ ভাগ উৎপাদন কম হচ্ছে।’

গাউছিয়া পাইকারি কাপড়ের বাজারের ব্যবসায়ী ও সাকিব ফেব্রিক্সের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, ‘একদিকে সুতার দাম বেশি, অপরদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এর মধ্যেই আবার গ্যাস সংকট। এভাবে চললে শিল্পমালিকদের পথে বসতে হবে।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাওঘাট জোনের জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুতের সমস্যাটি জাতীয় পর্যায়ের সমস্যা। এটা সবাই জানেন। আমরা গ্রিড থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছি সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। তবে কোনো কোনো সময় ৪০ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে। আবার কোনো কোনো সময় ৩০ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে। আবার কোনো কোনো সময় এর চেয়ে আরও অনেক কম লোডশেডিং হচ্ছে।’

জ্বালানি খাত নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টেক্সটাইল শিল্পসহ দেশের অন্যান্য শিল্প খাতে যাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, শ্রমিকরা চাকরি হারাবে, আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। এতে সামগ্রিকভাবে চাপে পড়বে দেশের পুরো অর্থনীতি।

অভিযোগ রয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত থাকলেও তা উত্তোলনে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর উদ্যোগ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর দাম শিগগিরই কমবে বলে মনে হচ্ছে না। বস্তুত সব ধরনের জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার সব সময় অস্থির থাকে। এ কারণে জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের শিল্প খাতকে বাঁচাতে হলে জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা কাটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সম্পদের সুষ্ঠু ও সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অপচয় রোধ করে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করাও জরুরি।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও