রূপগঞ্জে শুরু হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

জানুয়ারি ০২ ২০২৩, ২২:২৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিইটিএফ) এর ২৭তম আসরের পর্দা উঠেছে। নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার (১ জানুয়ারি) সকালে পূর্বাচলে স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন প্রসঙ্গে বলেন, পূর্বাচলে দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্যমেলা শুরু হলো। প্রথমবার যখন এখানে বাণিজ্যমেলা হয়, করোনার বিধিনিষেধের কারণে আসতে পারিনি। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলাম। তবে ডিজাইন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমি ছিলাম। এজন্য এখানে আসার আগ্রহ বেশি।

তিনি আরও বলেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি হিমশিম খাচ্ছে, তবুও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বাবা-মা-পরিবার হারিয়ে এদেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি।

সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, সেটাই করেছি।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। এছাড়াও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ ‘আমি তোমাদেরই লোক’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং দেশের রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবার দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। এছাড়া গতবার শিশুপার্ক ছিল না, এবার মিনি শিশুপার্ক রয়েছে। ফুডকোর্ট নিচে চলে গেছে, পরিবেশও ভালো হয়েছে। পরিসর বড় হয়েছে।
মেলা উপলক্ষে কুড়িল থেকে মেলার ভেন্যু পর্যন্ত যাত্রীদের আনা-নেওয়ার জন্য ৫০টি শাটল বাস চালু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন। বাসের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করলে যাত্রীরা ৫০ শতাংশ ছাড়ও পাবেন।

এবার মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ফ্রি।

মেলা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া মেলায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা রয়েছে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে মেলা ও এর আশপাশের নিরাপত্তায় মেলার নিয়োজিত বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা পদক্ষেপ ছিল।
মেলার নিরাপত্তা বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম সায়েদ জানান, মেলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয় দেখভাল করবেন। সাদা পোশাকেও বিশেষ টিম নিরাপত্তায় কাজ শুরু করেছেন। ফলে নিরাপদ পরিবেশে এ মেলা পুরোপুরি জমে উঠবে।

এর আগে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টার একটু দূরে হলেও মেলায় অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

মেলার মাধ্যমে আমরা দেশে তৈরি পণ্য দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাই। বাংলাদেশে তৈরি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরাই মেলার মূল লক্ষ্য বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্যের মান বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবছর রপ্তানি বাড়ছে। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি বেশি ছিল।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা দেশের অভ্যন্তরে ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেবল টাকার অংকে মুনাফা করার উদ্দেশ্য মেলার আয়োজন করা হয় না।
তিনি জানান, গতবছর মেলায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রপ্তানির স্পট আদেশ পাওয়া গিয়েছিল। প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরও ১০টি পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইসিটি খুবই সম্ভাবনাময় পণ্য, স্বল্পসময়ে এ খাতের রপ্তানি ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে মেলার আসর বসেছে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালে মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
এরপর গত বছর ২০২২ সালে নতুন ঠিকানায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল নতুন শহরে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উপলক্ষে পূর্বাচল নতুন শহরে নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার।###

 

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও