রূপগঞ্জ উপজেলার ইউএনও এখন মিষ্টার টেন পার্সেন্ট!

মার্চ ০৫ ২০২৪, ২০:২৫

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ রূপগঞ্জ উপজেলার ইউএনওর বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের দশ শতাংশ কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী অফি সার (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেলের অপসারণ দাবিতে ঝাড়ু মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় নাগরিক কমিটি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ দাবি করেছেন জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার, স্কুলের শিক্ষকরা। তাকে স্যার না বললেই শাস্তির খড়গ নেমে আসে।

অভিযোগ রয়েছে, ইউএনও আহসান মাহমুদ রাসেল ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রূপগঞ্জে যোগদানের পর থেকে টিআর, জিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপিসহ উপজেলা পরিষদের সরকারি বরাদ্দে নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকাশ্য ঘুষ বাণিজ্য করে আসছেন। অভিযোগ আছে, গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলেও অনিয়ম ঢাকতে সরকারি দপ্তরের কোনো তথ্য দেন না তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, চলতি বছরে ইউএনর সঙ্গে উপজেলার প্রাইমারী শিক্ষকদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ অনুষ্ঠানে এক নারী শিক্ষক ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তাকে ডেকে নিয়ে অপমান করেন। উপজেলার এক মহিলা কর্মকর্তা রেজুলেশন বইয়ে সামান্য ভুল করায় ঐ কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলে নারী কর্মকর্তার মুখের উপড় ছুঁড়ে মারেন। কয়েকজন নারী কর্মকর্তা বলেন, ওনি বিকাল ৫ টার পর নারী কর্মকর্তাদের ওনার রুমে গিয়ে বসে থাকতে বলেন। উপজেলার কর্মকর্তারা বলেন, তিনি অফিস করেন রাতে। ইউএনওর ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তার অত্যাচারে জাহাঙ্গীর আলম নামে তার গাড়ির চালক চাকরী ছেড়ে চলে যায়। এরপর আরেক চালক নুরু মিয়া ছুটিতে গিয়ে আর ফেরত আসেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি সবার সাথে খারাপ আচরণ করেন। দশটার মিটিংয়ে আসেন ১২ টায়। কোন অনুষ্ঠানে তাকে সভাপতি কিংবা প্রধান অতিথি করা না হলে ঐ অনুষ্ঠানে যান না।

ইউএনওর এলাকার বাড়ি মাগুড়া জেলার শ্রীপুর থানার গোয়ালপাড়া এলাকা সূত্রে জানা গেছে, তার বাবা বিশ^াস আব্দুস সাত্তার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের তেমন কিছুই ছিলোনা। বর্তমানে তার বাড়িতে ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ নির্মাণাধীন। কিনেছেন কয়েক বিঘা জমি। রূপগঞ্জের গোয়ালপাড়া এলাকায় জমি কেনার জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। আহসান মাহমুদ রাসেল এর আগে ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ছিলেন। এরপর ফরিদপুরের সদরপুরের ইউএনও ছিলেন।

ফরিদপুরের সদরপুরের একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি সদরপুরে থাকাকালীন আকোটের চর ইউনিয়নের কৃষ্ণ মঙ্গলের ডাঙ্গী (বটতলা) শতবর্ষী পুকুর ভরাট ও গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ কাজ বন্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা দেয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনি স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ঐ সময় আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ ও নির্মাণ নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, ইউএনও টিআর-কাবিখা প্রকল্পের অর্থ ছাড় করছেন না; প্রকল্পের নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না; আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাব দেন না; ইচ্ছামতো ব্যয় করেন; পরিষদের মাসিক সভায় জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য যথাযথভাবে লেখা হয় না; ইউনএনও নিজের মতো রেজুলেশন তৈরি করেন; ভাষা দিবস উদযাপনে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিজের মতো খরচ করেছেন; জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। জনপ্রতিনিধিরা বলেন, প্রায় চার মাস আগে ইউএনও রূপগঞ্জে যোগদান করেন। তাঁর দুর্ব্যবহারের কারণে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ইউএনওকে অপসারণ করা না হলে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবেন।

উপজেলায় সেবা নিতে আসা লোকজন বলেন, সাধারণ মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইউএনও’র নানা অনৈতিক কর্মকান্ড এখন টক অব দ্যা রূপগঞ্জে পরিণত হয়েছে। ইউএনওর এমন কর্মকান্ডে বিব্রত খোঁদ প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলও। ইউএনওর এসব দুর্নীতি, অনিয়মের তদন্ত ও আয়ের উৎস খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছে এলাকাবাসী।

অফিসের বই কিনার নামে টাকাআত্মসাত, এডিবির, টিআর, কাবিটাপ্রকল্প ও ১ পার্সেন্টের টাকা ইউনিয়ন পরিষদের নামে সুষম বন্টন না করে টাকা আত্মসাতেরর অভিযোগ রয়েছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। একাধিক বিশ্বস্থ সূত্র আরো জানায়, ইউএনও বিরুদ্ধে ইট ভাটার মালিকদের থেকে মোবাইল কোর্টে ভয় দেখিয়ে ইট ও টাকা আদায়, বিভিন্ন দিবসের নামে টাকা আদায় ও খরচের নামে টাকা আত্মসাত করেছেন। নানা কারণেই আলোচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ উঠেছে। এমন কোনো খাত বাকি নেই যেখানে হাত দেননি তিনি। কয়েকদিনের অনুসন্ধানে ইউএনও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ কথায় কথায় মানুষকে মোবাইল কোর্টে শায়েস্তা করার হুমকি দেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের বিপরীতে টেন পার্সেন্ট করে কমিশন বা ঘুষ ইউএনও না দেয়া হলে তিনি কোনো ফাইলই স্বাক্ষর করেন না। আগে কমিশনের টাকা বুঝে নিয়ে তারপরে ফাইলে হাত দেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত দপ্তর হচ্ছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দপ্তর।

অভিযোগের ব্যাপারে ইউএনও আহসান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি রূপগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই বিধি মোতাবেক সেবা দিয়ে আসছি। ভুলতা ফ্লাইওভার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা ও হকার উচ্ছেদ করেছি। পাশাপাশি সম্প্রতি চলমান এসএসসি পরীক্ষায় নকল প্রতিরোধে নকলে জড়িত থাকায় কিছু শিক্ষকের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়াও আমাকে কেউ স্যার বললে বিরক্ত নয় বরং ভাই বললে খুশি হই। তাছাড়া বরাদ্দ থেকে কোন পার্সেন্টিসের সাথে আমি জড়িত নই। মুলত কোন একটি পক্ষ আমাকে হেয় করতে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। ডুপ্লেক্স বাড়ির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও