রূপগঞ্জের তৈরি টুপি যাচ্ছে সৌদি- দুবাই, ঈদের আগে টুপি পল্লীতে ব্যস্ততা

মার্চ ১৬ ২০২৪, ০০:৫৮

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন,রূপগঞ্জঃ টুপি ছাড়া মুসল্লিদের চলেই না। রোজা রমজান ও ঈদে টুপির চাহিদা আরো বেড়ে যায়। রূপগঞ্জের নারীদের নিপুন হাতের তৈরি টুপির চাহিদা একটু বেশিই। বাহারি রঙের টুপি না হলে ঈদের ময়দানে যাবেই না ছোট বাচ্চারা। বাহারি নামের টুপি এখানকার কারিগররা তৈরী করে থাকেন। এর মধ্যে তারকা টুপি, হাফলং টুপি, বিস্কুট টুপি, মাকর টুপি, গিট্টু টুপি তৈরী হয় বেশী। একটি গিট্টু টুপি তৈরীতে খরচ পড়ে ৩০/৩২ টাকা। আর এ টুপি বিক্রি হয় চকবাজারে ৪৫/৫০ টাকায়। তবে কারিগররা ৭/৮ টাকার বেশী পায়না। মাঝখানে মহাজন বা প্রতিনিধি এবং দাদন ব্যবসায়ীরা লাভের অর্ধেক অংশ নিয়ে নেয়।

নিলুফার ইয়াসমিন। অভাবের সংসার। স্বামী নুর হোসেন দিনমজুর। লোকে বলে নুরা পাগলা। সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। হঠ্যাৎ করেই নিলুর সাথে সাক্ষাৎ মিলে টুপির মহাজনের। এরপর থেকেই অভাব জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। এখন তারা স্বচ্ছল।

টুপির গ্রাম বলতে উপজেলার কায়েতপাড়ার মাঝিনা নদীর পাড় এলাকাকে এক নামে চেনেন এখানকার সবাই, শিতলক্ষার তিরঘেষা গ্রামের শুরুতেই মহাজন আলী হোসেনের বাড়ী,বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ১০/১২জন নারী ব্যস্তহাতে সুতোয় গিটের পর গিট বেধে তৈরী করছেন একেকটি টুপি। জানা যায় একটি গিট্রু টুপি তৈরী করতে একজন দক্ষ কারিগরের সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। মাকর,বিস্কিট কিংবা অন্যকোন ডিজাইনের হলে সময় লাগে আরেকটু বেশী। মহাজন আলী হোসেন জানান, ঈদকে সামনে রেখে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে টুপির গ্রামে।

কারিগরেরা সবাই ব্যস্ত এই মৌসুমে দু-পয়সা কামিয়ে নেওয়ার জন্য। বর্তমানে যে টুপি তৈরী হচ্ছে এগুলো রপ্তানী হবে মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সেজন্য নিখুতভাবে তৈরী হচ্ছে একেকটি টুপি। আর পুরো রমজান মাস জুড়ে যেসব টুপি তৈরী হবে সেগুলো আমাদের দেশের জন্য। টুপির বানিজ্যিক প্রতিনিধি আলী হোসেন মহাজন আরো জানান, রপ্তানীকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টুপির ডিজাইন ও উপকরন সরবরাহ করা হয়। এ জন্য প্রতিনিধিকে নির্ধারিত পরিমানে জামানত দিতে হয়। প্রাপ্ত উপকরন দিয়ে প্রশিক্ষিত নারী কর্মীদের মাধ্যমে নক্শা অনুযায়ী টুপির দুই অংশ (ঘিরা ও তালু)তৈরী করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঐ প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌছে দিতে হয়। সরেজমিনে টুপি তৈরীর গ্রাম রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মাঝিনা নদীরপাড় এলাকায় গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী, ছাতিয়ান, হনিরা,পাড়াগাও,মাঝিনা, নাওড়া, পূর্বগ্রাম, বড়ালু, পশ্চিমগাঁও, পূর্ব চনপাড়া, ভাওলিয়াপাড়া, কেওঢালা, খামারপাড়া, তালাশকুর, নগরপাড়াসহ ১৬টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার নারী কারিগর প্রতিনিয়ত টুপি তৈরী করে যাচ্ছে। রফতানীকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রচেষ্ঠায় টুপির বাজার স¤প্রসারিত হচ্ছে। টুপির বাজার স¤প্রসারিত হওয়ায় বাড়ছে টুপির চাহিদা, বাড়ছে কারিগরের সংখ্যা। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের এ গ্রামগুলো এখন এক কর্মমূখর জনপদ। অন্যদিকে রাজধানীর ডেমরা থানার নড়াইপুর, মীরপাড়া, রাজাখালী, কামার পাড়া, আমুলিয়া, ঠুলঠুলিয়া, দূর্গাপুর, খলাপাড়া, ধিৎপুর প্রায় ১২টি গ্রামেও চলছে টুপি তৈরীর কাজ। এলাকার গৃহবধূরা সংসারের কাজকর্মের পাশাপাশি টুপি তৈরী করে আয় করছেন বাড়তি পয়সা।

“টুপি বিক্রি হলে লাভ হয়,কিন্তু মেশিনে তৈরী কাপড়ের টুপির কারনে বর্তমানে সুতার টুপির কদর কমে গেছে” কথাগুলো বললেন পাড়গাওঁ এলাকার মহাজন আব্দুল মতিন। তিনি বলেন “ঈদের সময় আইলে হুতার চাহিদা বাড়ে। এই সময়ডা টুপির বাজার ভালা অয়”। মধ্যেপ্রাচ্যে যায় রূপগঞ্জের তৈরী হাতের টুপি। কিন্তু বর্তমানে চাহিদায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। এমন বক্তব্য মহাজন আব্দুল মজিদের। মহাজনদের মতে এখন অনেক দেশেই টুপি তৈরী হয়। কিন্তু নকশা সুন্দর ও টেকসই হওয়ায় রূপগঞ্জের তৈরী হাতের টুপির কদর বেশী। তবে চাহিদা মাফিক সময়মতো সঠিকভাবে সরবরাহ করতে না পারায় বর্তমানে বাংলাদেশের টুপির চাহিদা কমে গেছে। যার কারনে বিপুল সম্বাবনা জাগলেও এখন নেমে এসেছে হতাশা। বললেন ঢাকার চকবাজারের টুপি ব্যবসায়ী নাসের বাবুল। তার মতে সীমিত কিছু এলাকায়]তৈরী হয় বলে এ সমস্যা হচ্ছে।

টুপির সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে চকবাজারে। এ ছাড়া বায়তুল মোকারমে রয়েছে আরেকটি বাজার। ঢাকার ফুটপাত গুলোতেও পসরা সাজিয়ে বসে টুপি বিক্রেতারা। এসব মার্কেটে যায় রূপগঞ্জের টুপি। চকবাজারের সাউদিয়া ট্রেডার্সের মালিক বদির উদ্দিন ইরান বলেন, আগে টুপির ব্যবসা ভালো ছিল। এখন মেশিনে কাপড়ের টুপি তৈরী হওয়ায় সুতার টুপির কদর কমে গেছে। তবে যারা চেনেন তারা হাতের টুপিকেই বেশী মূল্যায়ন করেন। হাতের টুপির সবচেয়ে বেশী ক্রেতা শৌখিন মানুষেরা। চকবাজারের ওসমানীয়া ট্রেডার্সের মালিক ওসমান গনী শফি জানান, আমরা দেশের বাইরে যেসব টুপি এক্সপোর্ট করছি সবই হাতের তৈরী। তবে মাঝখানের মহাজন আর দাদন ব্যবসায়ীরা না থাকলে আমরা আরেকটু ভালো লাভ করতে পারতাম। কারিগররাও দু‘পয়সা বেশী পেতো।

সময়ের আবর্তে টুপি শিল্পে খানিকটা ভাটা এলেও সঠিক পৃষ্টপোষকতা আর আর্থিক সহায়তার আশ্বাস পেলে টুপি শিল্প হতে পারে রপ্তানির মাধ্যেমে বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনের অন্যতম উৎস। এজন্য প্রয়োজন সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগ। যদি সামান্য প্রশিক্ষন আর পৃষ্টপোষকতা করে অভাবি ছিন্নমূল মানুষের হাতে কাজটা ধরিয়ে দেয়া যায়। তাহলে বাংলাদেশের টুপি শিল্প হতে পারে রপ্তানীর অন্যতম উপাদান।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও