“ভূমি অফিসের চেয়ার টেবিলেও ঘূষ খায়, ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে
নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ লোকে বলে, “ভূমি অফিসের চেয়ার টেবিলেও ঘূষ খায়, ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে না।” ভূমি অফিসগুলো কবে যে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে তা কেউ বলতে না পারলেও এ প্রথাই চলছে যুগ যুগ ধরেই। সরকার যায়, সরকার আসে, যুগের পর যুগ ভূমি অফিসগুলো একই রকম থাকে। কোনো পরিবর্তন হয় না। গ্রাহকের ভোগান্তি আর শেষ হয় না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোটা বাংলাদেশে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও অদৃশ্য কারনে রূপগঞ্জের ভূমি অফিসগুলোতে সেবার মানের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য নেই।
নামজারিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়, টেবিলে টেবিলে ঘুষ এ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কেউ নিচ্ছে আর কেউ নিরবেই দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সেবা প্রত্যাশী বলেন, টাকাতো সব সময়ই বেশি নিচ্ছে, কি করব, কাজ তো করাতে হবে, টেবিলে টেবিলে ঘুষ না দিলে ফাইল তো সওে না। টাকার দিকে চেয়ে থাকলে তো খাজনা খারিজ করা যাবে না। আমার সম্পদেও নিরাপত্তাতো আমারেই নিতে হবে। নতুন অফিসার আসলে কি হবে? আমরা সব সময়ই অসহায়। কত সরকার আইল গেল ঘুষ নেয়াতো বন্ধ করল না কেউ।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সহকারী কমিশনার ভূমি স্বাভাবিকভাবেই ভূমি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমই পরিচালনা করে আসছেন। গত পহেলা আগষ্ট ২০২৪ ইং পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল দুইভাগে ভাগ হয়েছে এসিল্যান্ড অফিস। ভাগ হওয়ার পর নতুন সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে যোগদান করেন মোঃ উবায়দুর রহমান সাহেল। যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন কাজ করতে পারেনি সহকারী কমিশনার ভূমি পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেল। নতুন অফিসার আসার পর পরিবর্তন হবে ভেবেছিলেন অনেকে, কিন্তু সে আশা গুড়েবালি। যে ই লাউ সেই কদু।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক মাস যাবৎ নামজারি সহ অন্যান্য সকল কাজ দাউদপুর, রূপগঞ্জ, ভোলাব ইউনিয়ন ও কাঞ্চন পৌরসভা এই চারটি ভূমি অফিসের মৌজা গুলির জমির কোন নামজারি করতে পারছে না সাধারণ গ্রাহক। এতে ব্যাহত হচ্ছে জমি রেজিষ্ট্রেশন, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অফিস সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জে সহকারী কমিশনার ভূমি পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেল চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে কোন আইডি দেয়া হয়নী তাই কাজের ধীর গতি। আইডি পেলেই কাজ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কথা হয় ভূক্তভোগী পূর্বাচল উপশহর প্লট মালিক ইমরুল আনোয়ারের সাথে তিনি বলেন, আমি গত ১৪ ই আগষ্ট আমার নিজ নামীয় নামজারী আবেদন করে সহকারী কমিশনার ভূমি পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলে জমা দিয়ে আসি কিন্ত এখন পর্যন্ত এর কোন কাজই হয় নাই। অফিসে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা জানায়, সহকারী কমিশনার ভূমি পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের আইডি করা হয়নী বলে কাজের ধীর গতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ৫ ই আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হবার পর থেকে দেশের সকল সেক্টরেই আমূল পরিবর্তন হলেও ভূমি সেবায় গ্রাহকদের হয়রানি লেগেই আছে।
আরেক ভূক্তভোগী নূর ইসলাম জানান, আমার নামজারী হয়েছে আগের অফিস তথা সহকারী কমিশনার ভূমি রূপগঞ্জ অফিসে । যখনই আমি ডি,সি,আর ও পর্চা করার জন্য মূল খতিয়ান থেকে মাইনাস করার জন্য জমা দেব ঠিক সে দিনই সকল নথি অফিস থেকে নতুন সার্কেলে স্থানান্তরিত হয়। এদিকে আমার পরিবারে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় নামজারী পূর্নাঙ্গ না হওয়ায় জমি বিক্রিও করতে পারছি না। এই সমস্যার সমাধান কবে হবে তাও অফিসের লোকজন বলতে পারছে না।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ভূমি (পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেল) বলেন, পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলটি একেবারেই নবসৃজিত হওয়ায় বর্তমানে নথিপত্র হস্তান্তর ও অফিস ভবনের স্থাপন, সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে৷ পূর্বাচল সার্কেলের ই-নামজারি আইডি ১৫ সেপ্টেম্বরের পরে শুরু হবে মর্মে মন্ত্রণালয় থেকে অবহিত করা হয়েছে। নামজারি আইডি পেলে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে।####