বরিশালের কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে

আগস্ট ২৭ ২০২০, ১৮:৫২

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃ বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিকালে দুটি মামলা হয়। বৃহস্পতিবার তিনি বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির হয়ে একটি মামলায় জামিন আবেদন করলে বিচারক নামঞ্জুর করেন। এবং কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিকালে দুটি মামলা হয়। এর একটি চাঁদার দাবিতে গোল্ডেনলাইন সড়ক পরিবহনের কাউন্টার ভাঙচুর করাসহ স্টাফদের মারধর অভিযোগে, অন্যটি চাঁদাবাজির অভিযোগ বিমানবন্দর থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।

কাছাকাছি সময়ে দুটি মামলা দায়েরের পরে বরিশাল নগরীর পশ্চিম জনপদের এই সন্ত্রাসী আত্মগোপনে ছিলেন দীর্ঘদিন। এনিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হলে চাপের মুখে তিনি বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন।’পুলিশের ভাষ্য ছিল, তিনি পলাতক, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তার বসত এলাকা কাশিপুরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছিল, লিটন মোল্লা এলাকায় রয়েছেন। দিনের বেলায় বাড়িতে থাকেন, রাত হলে পার্শ্ববর্তী আস্থানায় চলে যান। লিটন মোল্লার একজন ঘনিষ্ট বন্ধু এই তথ্য স্বীকার করে নিলেও বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাদের অবস্থানে অনঢ় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল তাকে খোঁজা হচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে না।

লিটন মোল্লার ঘনিষ্ট ওই সূত্রটি দাবি অনুযায়ী, গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি এলাকায় ছিলেন। ওই দিন রাতে পরিবহনযোগে রাজধানী ঢাকায় চলে যান এবং উচ্চআদালত থেকে জামিন নিতে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ করেন। কিন্তু উচ্চআদালত থেকে জামিন পেলেও নিম্ন আদালতে হাজির হতে হবে, এমন পরামর্শের আলোকে তিনি ঢাকায় আইনী সহায়তা না নিয়ে আবার ফিরে আসেন বরিশালে।

দল ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, লিটন মোল্লা গতকাল বুধার বরিশাল ফিরে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সনামধন্য আইনজীবীর সাথে কোন এক ব্যক্তির মধ্যস্তততায় আইনী সহায়তা চেয়ে বরিশাল আদালত থেকে জামিন লাভের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার পক্ষ নিলে নগর আ’লীগের একজন শীর্ষ নেতা নাখোশ হতে পারেন, এমন আশঙ্কা বিবেচনা করে ওই আইনজীবীদের মধ্যকার কয়েকজন কৌশলে তাদের সহকারিদের দিয়ে জামিন লাভের পরিস্থিতি তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিলে লিটন মোল্লা আদালতে উপস্থিত হন।

আদালত সূত্র জানায়, এই শ্রমিক নেতা আজ বৃহস্পতিবার খুব সকালে ছদ্মবেশে একজন আইনজীবীর চেম্বারে আশ্রয় নিয়ে কিছু সময় অবস্থান করে আদালতে উপস্থিত হন। বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. কবির উদ্দিন প্রামাণিক তার আবেদন নাকচ করে দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মিডিয়াকর্মীরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে আ’লীগসহ তাদের সমর্থিত আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ কেউই এই বিষয়ে মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানায়।

এদিকে বিমানবন্দর থানার জিআরও বৈচি বিশ্বাস লিটন মোল্লার জামিন আবেদন নামঞ্জুরের বিষয়টি দুপুরে নিশ্চিত করে বলেন, তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদাবাজি ও পরিবহন কাউন্টার ভাঙচুসহ স্টাফদের প্রহর করার এই মামলায় পুলিশ তার রিমান্ড চাইতে পারে।

উল্লেখ্য, আ’লীগের চলমান ১০ বছরের শাসনামলে এই প্রথম লিটন মোল্লা কারাগারে গেলেন। কিন্তু কৌশলী হওয়ায় তিনি পুলিশের কাছে ধরা দেননি। বর্তমান সকারের মধ্যভাগে এসে টেম্বু মালিক-শ্রমিক নেতা হিসেবে নথুল্লাবাদে বাসস্ট্যান্ডে নিজের আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, তার পিতা প্রয়াত জল কাদের মোল্লা জীবদ্দশায় আ’লীগে প্রতিদান রাখায় পুত্র লিটন মোল্লাকে শীর্ষ এক আ’লীগ নেতা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছিলেন।

ধীরালয়ে বেপরোয়া ওঠা যুববয়সী লিটন মোল্লা নানা অপকর্মের জন্ম দিয়ে বারবার পত্রিকায় যেমন শিরোনাম হয়েছেন, তেমন নিজ সংগঠন শ্রমিকদের কাছ থেকেও নিজের সম্মান নিজেই হারিয়ে ফেলেন। ঘটনাচক্রে নথুল্লাবাদ টার্মিনালে বাস মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে লিটন মোল্লাকে সেই শীর্ষ নেতা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় আবার তিনি হালে পানি পান। এবং একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বাস টার্মিনালসহ বাবুগঞ্জের রহমতপুর পর্যন্ত নিজের কব্জায় নেন। এর আগে পুরস্কারস্বরুপ লিটন মোল্লাকে কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হতে সহায়তা করা হয়। সেই সাথে তার আপন বড় ভাই ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা কালাম মোল্লাকে কাশিপুরের একাংশ ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে আ’লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত করা হয়।

ঘটনাচক্রে কামাল মোল্লার সাথে আ’লীগের ওই শীর্ষ নেতার বিরোধ তুঙ্গে উঠলে স্বার্থ ও কৌশলগত কারণে লিটন থেকে নিরব থেকে নেতার পক্ষে অবস্থান নিতে বাধ্য হন। একাধিক সূত্র বলছে, সেই শীর্ষ নেতা নথুল্লাবাদের নিয়ন্ত্রণ তার এক ঘনিষ্টজনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে লিটন মোল্লা বিরোধীতায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন। গুরু-শিষ্যের মধ্যে এই শীতল লড়াই চলছিল, ঠিক তখন গোল্ডেন লাইন পরিবহনে মোটা অংকের চাঁদা চাওয়ায় কাকতলীয়ভাবে তাকে দমনে সুযোগ এসে যায়।

সূত্রের ভাষ্য মতে, যে লিটন মোল্লা ছিল পুলিশের বন্ধু, সেই পুলিশই তার বিরুদ্ধে ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজির মামলা নিতে বাধ্য হয়। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় নেতার আর্শিবাদ লিটন মোল্লার ওপর থেকে সরে গেছে। এর কয়েকদিন পরেই লিটন মোল্লার ভাই কালাম মোল্লার একটি স্থাপনা সিটি কর্পোরেশন ভেঙে দেয়। পাশাপাশি লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে বিএমএফ নামক আরও একটি পরিবহন কোম্পানির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। ওই পরিবহন থেকে শ্যালক চাঁদা তুলতে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে তিনি স্বীকারোক্তি লিটন মোল্লার নির্দেশেই এই অপকর্মের দুসাহস নিয়েছেন। ফলে পুলিশ বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন। এতে আরও পরিস্কার হয়ে ওঠে লিটন মোল্লা এখন পিচ্ছিল পথে হাটতে বাধ্য হচ্ছেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, লিটন মোল্লার শীর্ষ ওই নেতার সাথে আপস বা করুণা লাভে বহুমুখী ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি এলাকা ছাড়েননি। ছিলেন কাশিপুরেই। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল আদালতে আসলে তার অধ্যায়ের পরিসমাপ্তির কফিনে শেষ পেরাকটি ঠুকে দেন বিচারক। এখন লিটন মোল্লার আশ্রয় হল কারাগারের অন্ধকার প্রকাষ্টে, একেই বলে নিয়তি।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও