বরিশালে দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষক!

এপ্রিল ১১ ২০২১, ১৯:৩৮

Spread the love

বরিশাল: বরিশালের বাকেরগঞ্জের শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে আয়-ব্যয়ে দুর্নীতির কারণে বেতন ভাতা সাময়িক স্থগিত করা হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি।

অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরেও অদৃশ্য শক্তিতে বহাল তবিয়তে থাকার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক   নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে। যা তদন্ত করা হয়। তদন্তে প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে এ তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা  মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।

প্রতিবেদন পেয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের এমপিও কেন বন্ধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে শোকজ করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে আসা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তদন্ত করে গত বছরের ৫ মে শিা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উ”চ শিা বিভাগে প্রতিবেদন পাঠায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উ”চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে আসা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচাড়িতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, প্রধান শিক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে স্কুলের টাকা বিধি বিধান অনুসরণ না করেই ব্যয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. শাহ আলম শরিফের পরিবর্তে শাজাহান শরিফকে চাকরিতে রাখা ও স্কুলের আয়ব্যয়ের হিসেব সঠিকভাবে না করার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের এমপিও বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিাক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি মাধ্যমিক ও উউচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

একই সাথে প্রধান শিক নিজামুল কাদিরের এমপিও কেন বাতিল করা হবে না তা জানাতে তাকে শোকজ করতে বলা হয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরকে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের ব্যাখ্যা নিয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে শিা অধিদপ্তরের মহপরিচালককে।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রাণয়ের সহকারি পরিচালক মাধ্যমিক উইং কাওছার হোসেন স্বারিত একটি নোটিশে প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বিগত বেতন ভাতা ছাড়করণের সুপারিশ করা হয়। যাহার নথি নং- ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০২৯.০০১.২০২০.২১০। নোটিশে অর্থ আত্মসাতের কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকার কথা উল্লেখ করে কোভিডকালীন আর্থিক সমস্যা বিবেচনায় প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বেতন ভাতা ছাড়করণের জন্য কমিটির সদস্যগণ একমত পোষণ করে বলে জানানো হয়।

এদিকে প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বেতনভাতা অনুযায়ী  অব্যাহতি দেয়ার দাবীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য শ্রীমতি ছায়া রায় চৌধুরী। চলিত বছরের ২৪ জানুয়ারী ওই দেয়া ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন ভাতা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয় এবং দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যহতি দিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশারেফ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়।

আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নিজামুল কাদিরের চালতো ভাইয়ের ছেলে আব্দুর রহমান হাওদারকে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়। সে থেকে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর আদালত কতৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বশিবো/বিঅ/২০২০/১১৪৮৬ নাম্বার স্মারক পত্রে অরসারণ করা হয়। পরে বোর্ডের নির্দেশে একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে এইচ.এম. মজিবুর রহমান মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরিশাল স্মারক নাম্বার বশিবো/বিঅ/২০২০/১১৮৪৩ তারিখ ১৮/১০/২০২০ অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য উক্ত সভাপতিকে অনুমোদন দেন নি। ফলে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদটি শূণ্য থাকার কারনে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত প্রবিধানমালা ২০১৯ যাহা বিগত ২০১৯ সালের ৭জুন প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত তার ০৮ (৩) নং অনুচ্ছেদ বিশেষ পরবর্তীতে মহানগর ব্যতিত অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক স্বয়ং বা কোন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কিংবা সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি হিসেবে সরকার কতৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে মর্মে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরিশাল কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে দরখাস্তটি জেলা প্রশাসকের হাতে দেয়।

বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ শূন্য থাকার কারনে প্রধান শিক্ষক (সাময়িক অব্যহতিপ্রাপ্ত) নিজামুল কাদিরের ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভা করতে না পারায় কোন রেজুলেশন করা হয় নি বিধায় প্রধান শিক্ষক (সাময়িক অব্যহতিপ্রাপ্ত) নিজামুল কাদির এর বেতন ভাতা স্থায়ীভাবে আগে অব্যাহতি দেওয়া সম্ভব হয় নি। এই সুযোগে নিজামুল কাদির অবৈধ এবং আর্থিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বেতন সীট এ ৩ মাস তার নাম না থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের বেতন সীট এ তার নাম অন্তর্ভূক্ত দেখা যায় এছাড়া তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তার পক্ষে সব সত্য, তদন্ত রিপোর্ট, আইনি বিধান পাশ কাটিয়ে বের করেন। সাময়িক অব্যহিত প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজামুল কাদিরের পক্ষে সুপারিশ আসাটাও অস্বাভাবিক, অনৈতিক, বিদ্যালয়টি ধ্বংস করার নতুনভাবে ঘড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যায় বলেও আবেদনে উল্লেখ করেন শ্রীমতি ছায়া রায় চৌধুরী।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও