শফিকুলের সখের সবজি বাগান এখন তার সফলতার সোপান

অক্টোবর ১৭ ২০২২, ১৪:১৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন : গোটা বিশে^ যখন মন্দার সঙ্কিত বার্তা বহন করছে । তখন নারায়ণগঞ্জের শফিকুল দেখাচ্ছেন এক সফলতার বার্তা। “বাঁচতে হলে নাঙ্গল ধর আবার এসে গাঁয়” কবির এ উক্তি সফলতায় রূপ দিয়েছেন শফিকুল। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তিনি এখন সফল উদ্যোগতা। পেয়েছেন প্রধান মন্ত্রীর পুরুষ্কারও। এলাকার সফল মানুষ, হিরো বা নায়ক, আদর্শ যা ই বলেন, এখন সাফকুলকেই বুঝায়। তার দেখাদেখি স্থানীয় অনেকেই এখন আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে মনোনিবেশ করছেণ। সফলতাও পাচ্ছেন।

বাবার কাছ থেকে কৃষি শিখে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান করেছিলেন। আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ আর পরিচর্চায় সেই আঙ্গিনার সবজির বাগান এখন ২৫ বিঘা ছাড়িয়েছে। সাথে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন প্রজন্মের এই কৃষকের সাফল্যের কথা। তাঁর প্রাপ্তির ঝুলিতে গত ১২ অক্টোবর যুক্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। এখন তিনি গ্রামের মানুষের কাছে রীতিমতো ‘হিরো’।

সবজি চাষ করে সফল হওয়া এই ৩৫ বছর বয়সী যুবকের নাম শফিকুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের সরাবদী গ্রামের লোকমান হেকিমের ছেলে। তাকে দেখে গ্রামের অনেকেই এখন আধুনিক পদ্ধতির সবজি চাষে ঝুঁকছেন।
সেই শফিকুল ইসলামের খোঁজে আড়াইহাজারে যাওয়া। তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরের পরাপরদি এলাকায় পৌঁছে শফিকুলের নাম বলতেই রিকশা চালক মোহাম্মদ আলী তাঁর বাড়ির ঠিকানায় নিয়ে চলতে শুরু করেন। শফিকুল ইসলামকে কিভাবে চিনেন? প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তর দিলেন-‘প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার দিছে, হেরে চিনে না কেডায়’।

বাড়ির সামনের রাস্তায় রিকশা থেকে নেমিই দেখা হয় শফিকুল ইসলামের সাথে।নানা কথার মাঝে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পুরস্কার নিয়ে যতটা না নিজেকে সম্মানিত বোধ করেছি, তারচেয়ে বেশি সম্মান পেয়েছি গ্রামে ফিরে। গ্রামের সকলেই আমাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন, দিয়েছে সংবর্ধনা। আমি জানতাম-আমাকে সবাই ভালোবাসে কিন্তু এতটা ভালোবাসে জানা ছিল না।’
শফিকুল ইসলামের দাদা ছিলেন কৃষক। বাবা লোকমান হেকিম নিজের অল্পজমিতে ধান, সরিষা, গম চাষ করে সংসার পরিচালনা করতেন। দাদা বাবার মতো শফিকুল ইসলামও কৃষিকে ছোট বেলা থেকে বেছে নিয়েছেন। তবে, পরিবর্তন এনেছেন চাষাবাদের পদ্ধতিতে।

শফিকুল ইসলাম তাঁর জমি গুলোর চাষাবাদ পদ্ধতি ঘুড়িয়ে দেখিয়ে বলেন, ‘সনাতন কৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতেন বাবা। তবে, ফসল তেমন একটা হতো না। এতে ক্ষতির সম্মূখিন হতে হতো। গ্রামের অনেকে তখন ধীরে ধীরে অন্য পেশায় ঝুঁকছিলেন। আমি যখন বুঝতে শিখেছি, তখন ভাবতাম- কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়। আড়াইহাজার উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি, তাদের পরামর্শে প্রথমে বাড়ির উঠানে (আঙ্গিনায়) কীটনাশক বিহীন পদ্ধতিতে হাইব্রিড সবজির চাষ শুরু করি। ফলাফল খুবই ভালো হয়। এরপর অর্ধ বিঘা জমিতে সবজির চাষ করি, পরের বছর হয় এক বিঘাতে চাষাবাদ। এখন আমি ২৫ বিঘা জমিতে সবজি উৎপাদন করি। প্রতিদিন আমিসহ ৮ থেকে ১০ জন জমি গুলোতে শ্রমদেয়, তাদের দৈনিক মুজুরীর অর্থ আসছে এই সবজি উৎপাদনের টাকা দিয়েছ। বর্তমানে ৫ বিঘা জমিতে কালো বেগুন, টমেটো, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পুঁইশাক, করলা, মূলা, ভটভটির মতো শাক সবজি রয়েছে। বাকি জমি গুলো আগামী রবি ফসলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।’

তাঁর উৎপাদিত সবজি গুলোর চাহিদা রয়েছে এলাকাবাসির মাঝে। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে হাটে। সবজির ভরা মৌসুমে ঢাকা থেকে ক্রেতা এসে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে তিনি একটি মাধ্যম ধরে বিদেশে লাউ রপ্তানী করছেন। এখন অন্যান্য সবজিও বিদেশে রপ্তানী করার আশা রয়েছে তাঁর।
সরাবদী গ্রামের ফাহিম হাসান নামের এক তরুণ বলেন, ‘অন্য ৮-১০

জনের জমি থেকে শফিকুল ইসলামের জমিতে ফসল ভালো হয়। তাই আমিও তাঁর কাছ থেকে সবজি উৎপাদন শিখছি। আমার ইচ্ছা আছে-পড়া লেখা শেষ করে, তাঁর মতোই সবজি চাষ করবো।’
শফিকুলের বাবা লোকমান হেকিম বলেন, আমরা যে পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতাম, তখন ফসল তেমন একটা হতো না। শফিকুল যখন নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে, তখন অনেকেই বলেছিল-টাকা গুলো নষ্ট হবে। কিন্তু এখন তাঁর সাফল্য থেকে অনেকেই এই চাষাবাদের পদ্ধতি সর্ম্পকে পরামর্শ নেয়। অনেকে আবার তাঁর পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন।

নতুন করে যারা চাষাবাদে আগ্রহী হতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে সফল এই কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি কাজে লোকসান নেই। তবে, এ জন্য প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা ও চাষাবাদের পদ্ধতি জানা। তাই আমি পরামর্শ দিবো, সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসার আর কৃষকদের সাথে কথা বলতে। সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে অবশ্যই সফল হবে।’

আড়াইহাজার উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান ফারুকী জানান, এখন অনেক যুবক কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু শফিকুল ইসলাম তাঁর ব্যতিক্রম। সে আধুনিক পদ্ধতিতে কীটনাশক বিহীন চাষাবাদ করছেন। এতে পরিশ্রমের পাশাপাশি খরচও কম হয়। তাকে দেখে অনেক যুবক উৎসাহিত হচ্ছে। গ্রামে নজির সৃষ্টি করেছে, তাই সরকার শফিকুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। সে যাতে আরও উৎসাহিত হয় এবং তাকে দেখে যুবকরা যেন কৃষি কাজে আসার প্রেরণা পায়। তার এই পুরস্কার পাওয়ার কারণে আমরা আড়াইহাজার উপজেলা কৃষি অফিসও গর্বিত।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও