বরিশালে ৪৯ গায়েবি মামলায় আসামি ৪৫০০

নভেম্বর ০১ ২০১৮, ১০:১৩

Spread the love

বরিশাল বিভাগের জেলা ও উপজেলাগুলোয় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৯টি গায়েবি মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় দলটির সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছেন, যিনি বছরের পর বছর বিদেশে বসবাস করছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে মাঠে থাকতে না দেয়ার অপকৌশল হিসেবে এসব গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ এসব মামলা করেনি। এ কারণে তাদের দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই। তবে পুলিশ বলছে, নাশকতা ও আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ ঠিক নয়।বিএনপি নেতারা বলছেন, গায়েবি মামলায় বিএনপির এমন নেতাকে আসামি করা হচ্ছে, যারা দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি নির্বাচনী থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত। এসব মামলার মাধ্যমে নির্বাচনকালে বিএনপিকে পঙ্গু করে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। হীন স্বার্থ হাসিলে বজ পাতের শব্দকে বোমার শব্দ বানিয়েও মামলা করা হচ্ছে। দ্বীপজেলা ভোলায় সবচেয়ে বেশি মামলা করার খবর পাওয়া গেছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির সোপানের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ জেলার পাঁচ উপজেলায় অক্টোবরের প্রথম দুই সপ্তাহে ১৯টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৯৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ১৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, প্রতিটি মামলায় বোমাবাজি ও নানা ধরনের নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ঘটনার বিষয়ে সাধারণ মানুষ কিছু না জানলেও পুলিশ জানে।

পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় ১৪টি মামলা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান টোটন বলেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় দুটি মামলা হয়েছে। এছাড়া অন্য উপজেলাগুলোয় একটি করে গায়েবি মামলা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, মামলায় দলের নির্ভরযোগ্য নেতাদের আসামি করা হয়েছে। নির্বাচনে যাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা এখন মামলার আসামি। বরগুনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হালিম বলেন, পাথরঘাটা উপজেলায় দুটি মামলা হয়েছে। এছাড়া জেলা সদরসহ বামনা, বেতাগী, তালতলী ও আমতলী উপজেলায় একটি করে মামলা হয়েছে। বরগুনা সদর থানার মামলার কথা উল্লেখ করে হালিম বলেন, এতে আসামি করা হয়েছে লাকুরতলা গ্রামের মজিবর মল্লিকের ছেলে মো. মাদানীকে। অথচ চার বছর ধরে মাদানী সৌদি আরবে বসবাস করছেন। ঘটনার যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, তখনও তিনি দেশে ছিলেন না।

বরিশাল (উত্তর) জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মেসবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে হিজলা, কাজীরহাট ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় তিনটি মামলা হয়েছে। এতে দেড়শ’রও বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, নাশকতার অংশ হিসেবে রাস্তার ইট তুলে ফেলেছে বিএনপির লোকজন। ভেঙে ফেলেছে কালভার্ট। পানি সরবরাহের লাইন তুলে ফেলার অভিযোগ পর্যন্ত আনা হয়েছে। অথচ পৌর এলাকার বাইরে পানি সরবরাহের লাইন থাকে না। পুলিশের ভাষায় কালভার্ট ভাঙা এবং রাস্তার ইট তুলে ফেলার ঘটনা ঘটল অথচ কেউ জানল না?

বরিশাল (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন বলেন, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর ও বাবুগঞ্জের তিন মামলায় ৩০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি। দাবি জানিয়েছি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের।

পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, স্বরূপকাঠি ও সদর উপজেলার পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি মামলা হয়েছে। এছাড়া জেলার মঠবাড়িয়া ও নাজিরপুরে একটি করে গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতের নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৭০০।

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মিঞা আহম্মেদ কিবরিয়া বলেন, জেলার চারটি উপজেলায় একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪১ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তফা কামাল মন্টু বলেন, এভাবে আজগুবি মামলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশে এবারই প্রথম। কোনো ঘটনাই ঘটল না অথচ মামলা হল। নির্বাচন থেকে বিএনপিকে সরিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে এসব করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন সংস্থাটির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা। রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ রকম কোনো মিথ্যা বা গায়েবি মামলা তার জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগও করেনি।

বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, কোনো মামলার বাদী আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কেউ নন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ফাঁকা মাঠে পরিকল্পিত নির্বাচন করতে এসব মামলা করাচ্ছে সরকার। একদিকে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ আর অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের দৌড়ের ওপর রাখা হবে। তিনি বলেন, কেবল দেশে নয়, বিশ্ব মিডিয়ায়ও এসব গায়েবি মামলা নিয়ে খবর হয়েছে। বজ পাতের শব্দকে বোমার শব্দ বানিয়ে মামলা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে একটাই সংশয়- শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে কি না। আর সেজন্যই বিএনপি জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে।সংবাদ উৎস-যুগান্তর

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও