বাবুগঞ্জ থেকে তিন উপজেলায় যাওয়ার সংযোগ সেতুর দাবি হিজলা, মুলাদি ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জনগনের

সেপ্টেম্বর ১২ ২০২০, ১৪:৫১

Spread the love

রিয়াদুল রিয়াদঃবরিশালে নদীবেষ্টিত উত্তর জনপদের তিন উপজেলার বাসিন্দাদের বহুল প্রত্যাশিত আড়িয়াল খাঁ নদের মীরগঞ্জ পয়েন্টে সেতু স্থাপনের উদ্যোগ অনেকখানি এগিয়েছে। তবে কবে নাগাদ স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু দাবি করেছেন, তার রাজনৈতিক জীবনের বড় চ্যালেঞ্জ আড়িয়াল খাঁ নদে সেতু নির্মাণের প্রধান অন্তরায় অর্থায়ন। চলতি বছরেই সমস্যার সমাধান হলে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবে রূপ নেবে। অপরদিকে মুলাদি উপজেলার একজন সাবেক আমলার দাবি, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আড়িয়াল খাঁ নদে সেতু নির্মাণ ২ বছর আগে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে তিন উপজেলার বাসিন্দারা এসব বাদানুবাদ এবং এক যুগের অপেক্ষার ঊর্ধ্বে থেকে সেতুর বাস্তবায়ন দেখতে চান। তারা এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

মেঘনাবেষ্টিত হিজলা, মুলাদি ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দাদের সড়কপথে বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করতে হলে মুলাদির মীরগঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছে আড়িয়াল খাঁ নদ পার হতে হয়। নগরীঘেঁষা বাবুগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পাশের উপজেলা মুলাদিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই আড়িয়াল খাঁ। বরিশাল নগরীর সঙ্গে মুলাদি, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার একাংশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে মীরগঞ্জ পয়েন্টে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের নির্বাচনি ওয়াদায় এ দাবিটি সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তিন উপজেলার বাসিন্দারা।

সর্বশেষ একাদশ নির্বাচনে বাবুগঞ্জ-মুলাদি উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির মীরগঞ্জ

সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য বলেন, সরকারের সম্ভাব্য সেতু নির্মাণ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ চার থেকে পাঁচটির মধ্যে একটি হচ্ছে মীরগঞ্জ সেতু। এখন অর্থায়নকারী দাতা সংস্থা না পাওয়াই এটি বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায়। তিনি বলেন, করোনা সংকট শুরুর আগে দাতা সংস্থা জাইকার সঙ্গে আলোচনা করে সেতুটির গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনে আসারও কথা ছিল। এরই মধ্যে করোনা সংকট শুরু হওয়ায় বিষয়টি পিছিয়ে গেছে। তবে এ বছরের মধ্যে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে দাবি করেছেন এমপি টিপু।

অপরদিকে মুলাদি উপজেলার বাসিন্দা অর্থমন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক জানিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তিনি জানান, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দবিহীন নতুন প্রকল্প তালিকার ৬০০নং ক্রমিকে আছে মীরগঞ্জ সেতুর নাম। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মুলাদি-হিজলা সড়কের অষ্টম কিলোমিটার অংশে (জেড ৮০৩৪) আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মাণ। সময়কাল এ বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

সাবেক অতিরিক্ত সচিবের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন করবে। যোগাযোগ মন্ত্রাণালয়ের সেতু বিভাগ পিপি তৈরি করে প্লানি কমিশনে প্রেরণ করবে। তারপরেই একনেকে অনুমোদিত হলে অর্থ বরাদ্দ মিলবে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে বলে আভাস দেন তিনি।

মুলাদি উপজেলা চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম মিঠু বলেন, মীরগঞ্জ সেতু স্থাপিত হলে শুধু তিন উপজেলাবাসীই উপকৃত হবেন না। পদ্মা সেতুর মাওয়া পয়েন্টের এপ্রোচ সড়কের সঙ্গে বিভাগীয় শহর বরিশালের সড়কপথের দূরত্ব অর্ধেক কমে ৯০ কিলোমিটার হবে। তিনি বলেন, এখন বরিশাল থেকে মাওয়া এপ্রোচ পথে যেতে সড়কপথ ১৮০ কিলোমিটার। মুলাদির ভেতর দিয়ে গেলে হবে ৯০ কিলোমিটার। মুলাদির মৃধারহাট-শরিয়তপুর পয়েন্টে সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। বরিশালের মীরগঞ্জে সেতু নির্মিত হলেই এসব হিসাব-নিকাশ বাস্তবে রূপ নেবে।

এদিকে মীরগঞ্জে সেতু নির্মাণের দাবিতে জনমত গঠনে স্থানীয় যুব সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গঠন করেছে হিজলা-মুলাদি-মেহেন্দিগঞ্জ ইউনিটি ফোরাম। ওই ফোরামের সদস্য মুলাদির আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামতে তারা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুক্রবার এ নিয়ে তারা সভা করেছেন। তিন উপজেলার মানুষই এক যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে সংগঠিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান জানান, মীরগঞ্জ পয়েন্টে সেতুর সম্ভাব্যতা নিয়ে পিপি সওজের ঊর্ধ্বতন দপ্তরে প্রেরিত হয়েছেন প্রায় এক বছর আগে। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থাকা কয়েকজন আমলাও সাম্প্রতিক সময়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থ বরাদ্দ পেলেই এটি বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র এমনটাই জানান নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও