কমিশনার পাগলা মিজান চোরাই বাহিনী গঠনের মাধ্যমে অগাধ সম্পত্তি মালিক হয়

ডিসেম্বর ২৪ ২০২০, ১০:৪৯

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃ  ছিনতাই করার সময় ধরা পড়ার পর বস্ত্রহীন অবস্থায় পাগলের মতো আচরণ করায় পুলিশ ‘পাগল’ ভেবে তাঁকে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে হাবিবুরের নাম হয় ‘পাগলা মিজান’।সিআইডির প্রতিবেেদনে আরও বলা হয়েছে যে,   অবৈধভাবে ২০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে এই পাগলা মিজান।এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার নামে রয়েছে অন্তত ২০ টি ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনের মামলার চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি সিআইডি আদালতে ওই চার্জশিট জমা দেয়।

পাগলা মিজান ওরফে হাবিবুরের বাবা আবদুল মালেক মিয়া এক সময়ে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঝাড়ুসহ খাবার সরবরাহ করতেন। হাবিবুর দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করে। সে সময় জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

হাবিবুর একসময় গড়ে তোলেন ‘মিজান বাহিনী’। এই বাহিনীর লোকজন সিটি করপোরেশনের ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করতো। পরে আবার সেই ঢাকনা সিটি করপোরেশনের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতো। তখন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে হাবিবুর। মোহাম্মদপুরে দখল করে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের (বিহারি) পরিত্যক্ত বাড়ি।সেখানে বসবাস শুরু করে।

হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের সর্ম্পকে এমন তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে।

গত বছর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করলে হাবিবুর রহমান মিজান বিদেশে পালানোর চেষ্টা করেন। এরপর ১১ অক্টোবর র‌্যাব তাকে মৌলভী বাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। পরে তার বিরুদ্ধে সেখানে অস্ত্র আইনে মামলা হয়।

র‌্যাব তার ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক ও এক কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় অর্থ পাচার আইনে (মানিলন্ডারিং আইন) মামলা হয়। এ মামলায় তদন্ত শেষে সিআইডি আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে কাগজপত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অর্থপাচার মামলায় হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। হাবিবুর রহমান অবৈধভাবে ২০ কোটি টাকার মালিক হন।

সম্পদের পাহাড়
সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, হাবিবুরের বাবা আবদুল মালেক মিয়া ঢাকায় জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঝাড়ুসহ খাবার সরবরাহ করতেন। হাবিবুর দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসে বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। সে সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। ছিনতাই করার সময় ধরা পড়ার পর বস্ত্রহীন অবস্থায় পাগলের মতো আচরণ করেছিলেন।

পুলিশ ‘পাগল’ ভেবে তাঁকে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে হাবিবুরের নাম পড়ে ‘পাগলা মিজান’। হাবিবুর একসময় গড়ে তোলেন ‘মিজান বাহিনী’। এই বাহিনীর লোকজন সিটি করপোরেশনের ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করতেন। পরে আবার সেই ঢাকনা সিটি করপোরেশনের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতেন। তখন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন হাবিবুর। মোহাম্মদপুরে দখল করেন আটকে পড়া পাকিস্তানিদের (বিহারি) পরিত্যক্ত বাড়ি। সেখানে তিনি বসবাস শুরু করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে হাবিবুর মিরপুর–১০ নম্বরের এ–ব্লকে একটি মিষ্টির দোকান দেন। নাম দেন হাবিব সুইটমিট। এর পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮০ সালে হাবিবুর গণপূর্তের ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। টানা ১৪ বছর তিনি ঠিকাদারির ব্যবসা করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বছিলায় একটি ইটভাটা দেন। নাম দেন এইচআরএম। বছিলায় হাবিব প্লাজা নামে একটি মার্কেট আছে তাঁর।

লালমাটিয়ার স্বপ্নপুরি হাউজিংয়ে আছে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট। মোহাম্মাদপুরের আওরঙ্গজেব সড়কে আছে আরেকটি ফ্ল্যাট। রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের মালিক হাবিবুর। সেখানে আছে তাঁর ১০টি ফ্ল্যাট। হাবিবুর রহমান মিশুক অ্যান্ড কোম্পানির মালিক। এ ছাড়া তিনি ঢাকার হজ কাফেলা অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বলেন, হাবিবুরের স্ত্রী মনি রহমানের নামে তিনটি গাড়ি ও তিনটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। চারটি ব্যাংক হিসাবে তাঁর নামে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫৪ টাকা পাওয়া গেছে। করোনায় হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মারা গেছেন। যে কারণে তাঁকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও