একই শিক্ষক ২ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, ১০ বছরেও নজরে আসেনি কর্তৃপক্ষের

মার্চ ২৬ ২০২৪, ২৩:২৬

Spread the love

এনামুল মবিন(সবুজ)জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুরঃ দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলায় সরকারি বিধিমালা উপেক্ষা করে একই ব্যক্তি শিক্ষকতা করছেন ২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রায় ১০ বছর এভাবে চলার পরেও নজরে আসেনি কর্তৃপক্ষের।

নিয়ম লঙ্ঘন করা এই শিক্ষকের নাম মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। তিনি একটিতে শিক্ষকতা করছেন সহকারী শিক্ষক বাংলা হিসেবে। অন্যটিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। দুটি প্রতিষ্ঠানেই এমপিওভুক্ত।

অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি চিরিরবন্দর উপজেলার জোত সাতনালা গ্রামে।
তিনি ২০১৬ সাল থেকে উপজেলার ৩নং ফতেজংপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মোল্লা পাড়া দ্বীমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে কর্মরত আছেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে সরকারি বেতন–ভাতাও নিয়মিত পাচ্ছেন তিনি। এর আগে নিজ বাড়ির পাশে পরিবারের সদস্যরা মিলে ১৯৯৯ সালে উত্তর সাতনালা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন সেটিও ২০২২ সালে এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠাকালিন থেকে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সেখানেও তিনি কর্মরত আছেন অদ্যাবধি।

সম্প্রতি সরেজমিনে উত্তর সাতনালা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় গিয়ে প্রধান শিক্ষক স্যারের সাথে দেখা করতে চাইলে ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষরা বলেন স্যার এসএসসি পরিক্ষার ডিউটিতে আছেন।

সহকারি শিক্ষদের কাছে আমরা জানতে চাই, এ স্কুল তো নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় তাহলে কোন পরিক্ষার ডিউটিতে গেছেন.? এর জবাবে শিক্ষকরা জানান আমাদের প্রধান শিক্ষক স্যার অন্য একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন সেই স্কুলের পরীক্ষার ডিউটিতে আছেন।

প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। সভাপতি সঙ্গে যোগাযোগ পর তিনি স্কুলে এসে হাজিরা খাতা দেখান সেখানে প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের হাজিরা খাতায় তার উপস্থিতির স্বাক্ষর পাওয়া যায়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের কাছে প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন কি না জানতে চাইলে ছাত্র ছাত্রীরা জানান হেড স্যার প্রতিদিনে স্কুলে আসেন আমাদের ক্লাসও নেয়।

উত্তরসাতনালা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মোঃ সেলিম বলেন, হেড স্যার সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন কোনো দিন ক্লাস নেয় কোনো দিন নেয় না টিফিনের সময় চলে যায়। আমাদের বাংলা ক্লাস নেয় হেড স্যার।

হাসিমপুর মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মোঃ নুরনবি বলেন স্যার প্রতিদিন স্কুলে আসেন আমাদের বাংলা ক্লাস নেন।

উত্তর সাতনালা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের আপন বড় ভাই আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি ২ বিদ্যালয়ে চাকরি করে ঠিকে তবে তিনি আমাদের স্কুল থেকে বেতন ভাতা নেন না।

তিনি আরো বলেন, উনি প্রধান শিক্ষক হিসেব যখন এ স্কুলে জয়েন্ট করেন তখন এ স্কুলের বেতন হয়নি পরে অন্য একটি স্কুলে জয়েন্ট করেন। এখন ২ যায়গায় চাকরি করছে সকালে আমাদের স্কুলে দেখা সোনা করে চলে যায় আবার আসে এভাবে চলছে। আমি ওনাকে চাকরি ছাড়তে বলি না কারন উনি শুরু থেকে এ স্কুল দেখা শুনা করেন ।

উত্তর সাতনালা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সহকারি শিক্ষক বলেন, যে কোন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে হলে এক প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর চাকরি করতে হয়। আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যে বিদ্যালয়ে চাকির করে সেখানে ১০ বছর চাকরির বয়স না হওয়ায় এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিল হবে না বিধায় ওই স্কুলে চাকরি ছাড়ছেন না তিনি। স্কুলের সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই হওয়ায় এ স্কুলে নতুন করে কোন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে রেখেছেন।

হাসিমপুর মোল্লা পাড়া দ্বীমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে আব্দুর রাজ্জাক সহকারি শিক্ষক
(বাংলা) কর্মরত আছেন । উনি ১০ টায় হাজিরা দেয় এবং ৪:১৫ পর্যন্ত আমাদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন, ওনার বাড়ির কাছে উনি একটা প্রতিষ্ঠান চলমান রাখছে ইদানীং এমপিও ভুক্ত হয়েছে। তিনি ওখানে কর্মরত আছে কি না এটা আমার যানা নাই তিনি আমার এখানে কর্মরত এখান থেকে বিল বেতন উত্তলন করেন।

শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

চিরিরবন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহী বলেন, হাসিমপুর মোল্লাপাড়া দ্বীমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক চাকরি করেন। তবে উত্তর সাতনালা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছে তা আমার জানা ছিলো না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও