বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামেবৃদ্ধা মাকে ঝুপড়ি ঘরে রেখে বউ নিয়ে ছেলে থাকে দোতলা ভবনে

জুন ১৫ ২০১৯, ১২:২৬

Spread the love

অনলাইন ডেস্ক:: জন্মের পর যত্ন করে সন্তানকে মানুষ করেন বাবা-মা। সন্তান বড় হলে তাকে নিয়ে বাবা-মা হাজারো স্বপ্ন দেখেন। কোনো কোনো সন্তান বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে আবার কেউ তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়।

ছেলে থাকে দোতলায়, মা গাছতলায়

ছবি: সংগৃহীত

নিজে না খেয়ে একসময় যে ছেলের মুখে খাবার তুলে দিয়েছিলেন, আদর-যত্নে ছেলেকে বড় করেছেন সেই ছেলের দোতলা বাড়িতে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধা মা রশি বেগমের। ৮৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার ঠাঁই হয়েছে ছেলের দোতলা ভবনের পাশের ঝুপড়ি ঘরে।

শেষ বয়সে নানা জটিল রোগে ভুগছেন রশি বেগম। ঝুপড়ি ঘরে বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ মা। কে করাবেন তার চিকিৎসা। দোতলা ভবনে ছেলে মো. ইউনুস ফকির স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। ওই ভবনের পাশেই মায়ের ঝুপড়ি ঘর। এরপরও বৃদ্ধা অসুস্থ মায়ের খোঁজখবর নেন না ছেলে ইউনুস।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের ঘটনা এটি। ওই গ্রামের মৃত কাশেম ফকির ও রশি বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে ইউনুস ফকির।

ইউনুস ফকিরের প্রতিবেশীরা জানান, রশি বেগমের ভাই-বোন না থাকায় বাবার সব সম্পত্তির মালিক হন রশি বেগম নিজেই। রশি বেগম তার একমাত্র ছেলে ইউনুসের সুখের জন্য নিজের বাবার বাড়ির সব সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় এক যুগ আগে টাকা তুলে দেন ছেলের হাতে। সেই টাকা দিয়ে ইউনুস নির্মাণ করেন দোতলা ভবন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইউনুস ওই ভবনে থাকলেও মায়ের ঠিকানা হয়েছে ভবনের পাশে রশি বেগমের বাবার বাড়ির অন্য এক ব্যক্তির জায়গার ঝুপড়ি ঘরে।

রশি বেগমের খালু খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা খলিল মিয়া বলেন, অনেক দিন আগে রশি বেগমকে তার ছেলে ও পুত্রবধূ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর স্থানীয়রা তাকে কোনোরকমে থাকার মতো একটি ঘর তুলে দেন। সেখানে আশ্রয় হয় রশি বেগমের। ছেলে ইউনুস মায়ের কোনো খবর রাখে না, ভরণ-পোষণ দেয় না। এমনকি নাতিরা দাদির খোঁজখবর নেয় না। এ অবস্থায় প্রতিবেশীরা খাবার দিলে রশি বেগম খান, না দিলে উপবাস থাকেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বয়সের ভারে নানা জটিল রোগে অসুস্থ রশি বেগম এখন ঠিকমতো কানে শোনেন না। ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। কেউ কিছু বললে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকেন এই বৃদ্ধা মা।

এরই মধ্যে রোববার ইউনুস ফকির প্রতিবেশী মো. মাহাবুবের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালিমা বেগমকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। ওই ঘটনায় হালিমার ভাই নাসির মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পরে ইউনুসকে গ্রেফতার করে সোমবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।

স্থানীয়রা জানান, ইউনুসের বিরুদ্ধে এলাকায় জমি দখল, চুরি, জমি রেকর্ড করে দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া, লোকজনকে হয়রানি করা, প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। মায়ের প্রতি অবিচার ও অন্যায় আচরণ করার কারণে ইউনুসের আজ কারাগারে ঠাঁই হয়েছে।

আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন বলেন, অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে মারধরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ইউনুস ফকিরকে রোববার গ্রেফতার করা হয়। সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও