খোলা মাঠে ৫বছর ফেলে রাখা ৪৩০০ মে.টন ইউরিয়া সারের অর্ধেক জমে শক্ত হয়ে গেছে

আগস্ট ১৭ ২০২০, ২০:৪৪

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃঈশ্বরদীর পাকশী নর্থবেঙ্গল পেপার মিলের খোলা মাঠে পাঁচ বছর ধরে ফেলে রাখা প্রায় চার হাজার ৩০০ মে.টন ইউরিয়া সারের অর্ধেক পরিমাণ জমে শক্ত হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আবার ইট ভাঙা মেশিনে গুঁড়া করে কৃষকদের কাছে বিক্রির পাঁয়তারা করছেন বিসিআইসির স্থানীয় কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, বন্ধ থাকা পেপার মিলের খোলা মাঠে ২০১৫ সাল থেকে ওই পরিমাণ সার স্তূপ করে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এ সার এখান থেকে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিআইসির বগুড়া নিজিওনাল অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, দেশে ২৫ লাখ মে.টন ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণ করতে দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা প্রচুর পরিমাণ সার রাখার মতো গুদাম নেই। ফলে বিভিন্ন সরকারি অব্যহৃত জায়গায় ত্রিপল দিয়ে ঢেকে এগুলো রাখা হয়।

বিএডিসির নিজস্ব গুদামগুলো প্রায় সময় ভর্তি থাকে। তিনি অবশ্য জমাট বাঁধা সারের গুণগত মান সম্পর্কে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিসিআইসির সূত্র জানায়, এখন সরকার নির্ধারিত প্রতি টন ইউরিয়া সারের দাম ১৪ হাজার টাকা। প্রতি বস্তা ৭০০ টাকা। মজুদ থাকা বিপুল পরিমাণ সারের মধ্যে এক হাজার মে.টনের গুণগত মান নষ্ট হলেও ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি চার লাখ টাকা।

যদিও সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। এদিকে সার জমাট বেঁধে যাওয়ায় সেগুলো গুঁড়ো করে বিসিআইসির ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১৫ আগস্ট এ সার দেখতে একটি টিম পেপার মিলে যায়।

এদের মধ্যে ছিলেন বিসিআইসির (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন) ডিজিএম (কমার্শিয়াল) কেএম মাসুদুল আলম, বিএফও ও বিএফএম ডিলার সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব রিয়াজ উদ্দিন, বিসিআইসির ডিলারদের জেলা প্রতিনিধি, কৃষক প্রতিনিধি মুরাদ মালিথা প্রমুখ।

দীর্ঘদিন ইউরিয়া সার রোদ-বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় পড়ে থেকে জমাট বেঁধে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। এ সার কোনো ডিলার নিতে আগ্রহী না হওয়ায় গত বছর মার্চ মাস থেকে ইট ভাঙ্গা মেশিন দিয়ে এসব দলা বাঁধা সার গুঁড়া করে রিপ্যাকিং শুরু করা হয়।

এ রিপ্যাকিং বেশ কিছু সার চাপ সৃষ্টি করে ডিলারদের নিতে বাধ্য করা হয়, যা কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক মাসে ৩৫০ মে.টন রিপ্যাকিং সার সুগার মিলের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

এ সার মিলের নির্ধারিত আখ চাষীদের কাছে ঋণের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। এসব সার ব্যবহারে কোনো সুফল কৃষকরা পাবেন কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি আরো জানায়, এখনও এক হাজার ৮৬০ মে.টন রিপ্যাকিং ও ৫৭ মে.টন দলা বাঁধা ইউরিয়া সার নর্থবেঙ্গল পেপার মিলের মাঠে স্তূপ করে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা আছে।

মজুদকৃত সারের দুরবস্থা দেখে পর্যবেক্ষণ টিমের এক সদস্য পাবনা জেলা কৃষক প্রতিনিধি সাবেক ভিপি মুরাদ মালিথা বিসিআইসি কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহামারী করোনা, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষকরা যখন দিশেহারা যখন প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়েছেন, কৃষি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে শত শত কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছেন, তখন এ নষ্ট ও ব্যবহার অনুপযোগী সার কৌশলে কৃষকদের দিয়ে সরকারের কৃষি নিয়ে আশার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।

এ কাজ সরকারকে বিব্রত করার শামিল। তিনি এ ব্যাপারে তদন্ত দাবি করেন। এ সময় ডিজিএম (কমার্শিয়াল) মাসুদুল হক সব ডিলারকে কিছু কিছু করে এ সার নেয়ার অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, সারের গুণগত মান নাকি নষ্ট হয় না। এর জবাবে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এ সারের রাসায়নিক পরীক্ষা না করা পর্যন্ত ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

এ সময় ডিলার প্রতিনিধিরাও কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর এ সার গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি শোনার পর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি।

কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, দীর্ঘদিন মজুদ রাখা ওই ইউরিয়া সারের গুণগত মান সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগারে যাচাই না করে প্রয়োগের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলা কঠিন।উৎসঃ দৈনিক যুগান্তর

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও