মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন কথিত ২য় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা

এপ্রিল ৩০ ২০২১, ১২:০২

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃবিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক বার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা, বিয়ে না করা এবং আটক রাখার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম- মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন কথিত ২য় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় গিয়ে মামলাটি করেন ঝর্ণা। মামলার নম্বর ৩০।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। তিনি জানান, মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিয়ে ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার মামুনুল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

মামুনুল হক দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও মামলায় জান্নাত নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন সময় আমাকে হোটেল ও রিসোর্টে  নিয়ে যান।’

মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে জান্নাত বলেন, ‘২০০৫ সালে তাঁর স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্বামীর বন্ধু হওয়ায় আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে–শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুলের কারণে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে মামনুলের পরামর্শে বিবাহবিচ্ছেদ হয়।’

অভিযোগে জান্নাত বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বলেন। আমি ঢাকায় চলে আসি। মামুনুল আমাকে তাঁর অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তাঁর প্রলোভনে পা দিই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পারলারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।’

জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, ‘৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।

জান্নাত বলেন, পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’

এর আগে, ১৩ এপ্রিল হেফাজত নেতা মামুনুল হক নারীসহ নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে ধরা পড়েন। তখন তিনি ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। পরে প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বার সঙ্গে একটি ফোনালাপ ফাঁস হয় তার। যে খানে মামুনুল বলেন- জনরোষ থেকে বাঁচতেই জান্নাত আরা ঝর্নাকে দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। আসলে ঐ ঝর্না হাফেজ শহিদুলের স্ত্রী।

১৮ এপ্রিল মামুনুল গ্রেফতার হলে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলে। ভরন পোষন দেয়ার বিনিময়ে  দুই নারীর সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিক শারীরিক সম্পর্ক করেছিল মামুনুল। রিসোর্টকাণ্ডের পরে জান্নাত আরা ঝর্নাকে মামুনুলের বোনের মোহাম্মাদপুরের বাসায় রাখে।সেখান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ তাকেে বাবার জিম্মায় দেয়।

হেফাজত নেতা মামুনুল হক বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন। পাকিস্তানি জঙ্গিসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং তার ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকা জমা থাকা অর্থের উৎসের সন্ধান করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও