ত্রিমাত্রিক বলাৎকারের বহুমাত্রিক প্রতিক্রিয়া!

মার্চ ৩১ ২০১৮, ২৩:২৪

Spread the love
গোলাম মাওলা রনি
বাংলা ব্যাকরণে বলাৎকারের প্রাথমিক অর্থ বলপ্রয়োগ হলেও আমরা সবাই এটির দ্বারা সাধারণত ধর্ষণই বুঝি। অন্যদিকে ধর্ষণের আভিধানিক অর্থ হলো পীড়ন বা অত্যাচার। ভাষা পণ্ডিতরা দমন ও পরাজিতকরণকেও ধর্ষণ হিসেবে আখ্যা দেন। আমাদের সমাজে পুরুষ কর্তৃক বল প্রয়োগে নারীর সম্ভ্রমহানি কিংবা সতীত্ব নষ্ট করা বলতে যা বোঝায় তার সঠিক অর্থটি পাওয়া যায় ইংরেজি ভাষায় রেপ নামক শব্দটিতে। সুপ্রাচীন ইউরোপে ল্যাটিন যখন রাষ্ট্রভাষা অথবা সরকারি ভাষা ছিল ঠিক তখনই আইনবিজ্ঞানে এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল র‌্যাপিরি নামে। পরে রাজদরবার ও আইন-আদালতে ল্যাটিনের পরিবর্তে যখন রোমান ভাষা চালু হলো তখন তা রেপটাস নামে অভিহিত হলো। মেডিয়েভাল ইংলিশ অর্থাৎ মধ্যযুগের প্রারম্ভে প্রচলিত ইংরেজি ভাষায় রেপটাস শব্দটি রেপ হিসেবে ইংলিশ লিগ্যাল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হয়ে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করল।

প্রাচীন দুনিয়ার অসভ্য অঞ্চলগুলোয় ধর্ষণ কোনোকালেই বৃহৎ কোনো অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না। কিন্তু গ্রিক সভ্যতা, রোমান সভ্যতা এবং মুসলিম সভ্যতার পথ অনুসরণ করে মধ্যযুগের ইউরোপে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে নরম্যান কনফুয়েস্ট বা নরম্যান্ডির ডিউক দ্বিতীয় উইলিয়াম কর্তৃক ইংল্যান্ডের ক্ষমতা দখলের পর ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ফৌজদারি কার্যবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আজকের নিবন্ধে আমি ধর্ষণের আইনি ইতিহাসের আদি-অন্ত নিয়ে আর আগ বাড়াব না। তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন দেশে অদ্ভুত সব কালা-কানুনের দু-চারটি উদাহরণ দিয়ে শিরোনাম প্রসঙ্গে চলে যাব।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, রেপ বা ধর্ষণ শব্দটি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে একেক দেশে একেক রকমভাবে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চাশের দশকে অর্থাৎ ১৯৫০ সাল অবধি কোনো শ্বেতাঙ্গ মহিলা যদি স্বেচ্ছায় এমনকি পয়সার বিনিময়ে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সঙ্গে যৌনসঙ্গম করত তবে তা মার্কিন আইন মোতাবেক ধর্ষণ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত হতো। অন্যদিকে, বর্তমানের মার্কিন আইনে স্ত্রীর সম্মতি ব্যতিরেকে স্বামী যদি যৌনসঙ্গম করে তবে স্ত্রী ইচ্ছা করলে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করতে পারেন। বর্তমানের আলোচিত এ আইনটি কিন্তু ১৯৭৯ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিল না। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্য ধর্ষণ বলতে নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাস্তুচ্যুত, অপহরণ কিংবা অপমান করাকে বোঝাত। অন্যদিকে প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রমতে ধর্ষণ বলতে পুরুষ কর্তৃক নারীর যৌনাঙ্গে জোরপূর্বক পুরুষাঙ্গ প্রবিষ্ট করাকে বোঝাত। এর বাইরে অন্য কোনো অশালীন আচরণ ও অঙ্গভঙ্গিকে ধর্ষণ আখ্যা দেওয়া হতো না।

অনাদিকাল থেকে এই সেইদিন পর্যন্ত ধর্ষণকে যুদ্ধক্ষেত্রের অন্যতম হাতিয়ার বিবেচনা করা হতো। প্রথম মহাযুদ্ধ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, সাম্প্রতিককালের বলকান, উপসাগরীয় যুদ্ধ কিংবা সিরিয়ার যুদ্ধে লাখ লাখ মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। জাপান কর্তৃক চীনের নানকিং তাণ্ডবে প্রায় এক লাখ এবং কোরিয়া তাণ্ডবে জাপানি বাহিনী কর্তৃক দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ন্যক্কারজনক কলঙ্ক হিসেবে পৃথিবীবাসীকে স্তম্ভিত করে তোলে। মধ্যযুগের প্রায় প্রতিটি রণক্ষেত্রে কিংবা নতুন অঞ্চলে দখলিস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলমতনির্বিশেষে ধর্ষণকে রাজকীয় আদেশে রীতিমতো বৈধ করা হয়েছিল। কেবল ইসলামের প্রাথমিক যুগের প্রথম কয়েক শ বছরের মুসলিম বিজয়ের ইতিহাসে মুসলিম সেনাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। অন্যদিকে ক্রুসেডের নামে পরিচালিত ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ইউরোপীয় খ্রিস্টান যোদ্ধারা কয়েক শ বছর ধরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ষণের যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তার নির্মমতার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা করা যাবে না।

আজকের শিরোনাম প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পূর্ব-ভূমিকা দিতে গিয়ে ধর্ষণ সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলাম তা কেবল এ কথা বোঝানোর জন্য যে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ধর্ষণের সংজ্ঞা যেমন পাল্টে গেছে তেমনি ধর্ষণের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত নর-নারী এবং তাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ও যাতনার পরিমাণও সময়ের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। মধ্যযুগের যুদ্ধ, দাস ব্যবসা, যৌনদাসীসংক্রান্ত ধর্ষণ এবং সাম্প্রতিককালের ডেইট রেপ, গ্যাং রেপ, বৈবাহিক রেপ, শিশু ধর্ষণ, কারাগারে ধর্ষণ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিভ্রান্ত করে ধর্ষণ, কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণ, আপন আত্মীয় বা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় দ্বারা পরিবারের অভ্যন্তরে ধর্ষণ কর্ম ইত্যাদির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ ধর্ষণের দ্বারা আক্রান্ত নারী কিংবা পুরুষ কোন সময় কীভাবে এবং কার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলেন তার ওপর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে। প্রাচীনকালে কিংবা মধ্যযুগের যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা ক্ষমতাসীনদের রঙ্গমহলে ধর্ষণ ছিল একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা কিয়ৎকাল পরে বেদনার ক্ষত থেকে নিজেদের শরীর ও মনকে রক্ষা করতে পারত যা আধুনিককালে বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব একটা ঘটনা।

বর্তমানকালে ধর্ষণ সাধারণত ত্রিমাত্রিকভাবে সংঘটিত হয়। ধর্ষণকারীর মন-মস্তিষ্ক ও শরীর যেমন কুকর্মটি করার জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে যুগপত্ভাবে অগ্রসর হয় এবং যথাসময়ে তা ছলে-বলে-কৌশলে সম্পন্ন করে তেমনি ধর্ষণের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সমানতালে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ধর্ষণসংক্রান্ত নির্মমতা সাম্প্রতিককালে ইতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট সময় পার করছে। প্রাচীন দুনিয়ায় কিংবা মধ্যযুগে অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের ধর্ষণকারীরা সাধারণত পাশবিক আনন্দ লাভ এবং ক্ষেত্রবিশেষে আনন্দ লাভের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের মনে ভয় সঞ্চার করার জন্য ধর্ষণ করত। কেউ কেউ বিজয়ের উল্লাস উপভোগ করার জন্য, আবার কেউ পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ধর্ষণ করত। ইতিহাসের কোনোকালে এবং কোনো অবস্থাতেই ধর্ষণের পর ধর্ষণ আক্রান্তকে মেরে ফেলা অথবা ধর্ষণ-পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত নর-নারীকে জিম্মি করে পুনরায় ধর্ষণের পাশাপাশি তার কাছ থেকে অর্থ-সহায়সম্মতি হাতিয়ে নেওয়ার মতো পৈশাচিক মন-মানসিকতা ধারণ করত না যেমনটি বর্তমানকালে অহরহ ঘটছে।

ইদানীংকালে তথাকথিত ধর্ষণ কেবল উন্মত্ত পুরুষ কর্তৃক নারীর শরীর, মন ও মস্তিষ্কে আঘাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং নারী-পুরুষ ছাড়াও, নারী কর্তৃক পুরুষ, নারী কর্তৃক নারী, পুরুষ কর্তৃক পুরুষ এবং মানুষ কর্তৃক পশু ধর্ষণের ঘটনাও অহরহ ঘটছে। ধর্ষণ এমনিতেই একটি বিকৃত মানসিকতার পাশবিক আচরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু ইদানীংকালের প্রযুক্তির ছোঁয়া এবং আধুনিক সভ্যতার বিষক্রিয়ায় ধর্ষণের বিকৃত রূপ এমন নির্মমতা পেয়েছে যা হাজার বছরের মানবসভ্যতা অতীতকালে কল্পনাও করেনি। ছয় মাস বা এক বছরের কন্যাশিশুকে একটি ষাটোর্ধ্ব পাষণ্ড যখন ধর্ষণ করে তখন আধুনিক সভ্যতা উল্টোরথে চড়ে কোথায় পালাবে তা যেমন খুঁজে পায় না তেমনি ছোট্ট অবোধ সেই কন্যাশিশুটির যৌনাক্ত যখন ব্লেড দিয়ে কেটে পাষণ্ড বৃদ্ধ রক্তাক্ত করে নিজের পাশবিকতার ক্ষেত্রটিকে প্রসারিত করে ফেলে তখন কী ধরনের নির্মমতা সৃষ্টি হয় তা কল্পনা করলে মানবহৃদয় তো দূরের কথা জড়পদার্থও কান্নায় ভেঙে পড়ে অভিশম্পাত দিতে থাকে।

আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা ধর্ষণ সম্পর্কে বাংলা ব্যাকরণের আভিধানিক অর্থ নিয়ে খানিকটা আলোচনা করতে চাই। মানুষের অদম্য স্বৈরাচারী লিপ্সা থেকেই মূলত ধর্ষণের উদ্ভব হয়। প্রায় ১০০ বছর আগে বাংলা ব্যাকরণে ধর্ষণ সম্পর্কে যে বহুমুখী অর্থ করা হয়েছিল তা আজ অক্ষরে অক্ষরে দেশ-বিদেশের শহর-বন্দর, গাঁও-গ্রাম, নদী-সমুদ্র, অরণ্য এবং পাহাড়-পর্বতে ছড়িয়ে পড়েছে। ধর্ষণের অন্যান্য প্রতিশব্দ যথা পীড়ন, অত্যাচার, বল প্রয়োগে ভোগ ও দখল করার প্রচেষ্টা এখন নারী-পুরুষের গোপন অঙ্গে আঘাত করার উদগ্র দুর্বৃত্তপনা থেকে বাড়তে বাড়তে সমাজ সংসারের সর্বত্র এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে গাছের পাতা, ফসলের মাঠ, নদীর জল ইত্যাদিও ধর্ষণকারীর ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

বাংলা ব্যাকরণের শব্দগত অর্থ বিবেচনায় নিলে সেসব কর্মকাণ্ডও ধর্ষণ বলে স্বীকৃতি পাবে যা আমাদের মন-মানস, চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা, মুখমণ্ডল, পাকস্থলী এবং পায়ুপথ গ্রহণ করতে চায় না অথবা পারে না কিন্তু ব্যক্তিবিশেষ, সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণি বা শ্রেণিশক্তি যখন জোর করে আমাদের শরীর, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়সমূহ ও ইচ্ছাশক্তিকে যাতনা দেয় তখন প্রকারান্তরে আমরা ধর্ষণের শিকার হয়ে ধর্ষণকারীদের উন্মত্ততা বাড়িয়ে দিই বার বার ধর্ষণ করার জন্য। আমরা যা খেতে চাই না অথবা আমরা যা শুনতে চাই না তা যখন জোর করে আমাদের খাওয়ানো এবং শোনানো হয় তখন আমাদের ঠোঁট, জিব, মুখগহ্বর, খাদ্যনালি, পাকস্থলী, রেচনতন্ত্র থেকে শুরু করে কর্ণকুহর ধর্ষিত হয়ে পড়ে। একইভাবে আমরা যা দেখতে চাই না তা দেখিয়ে আমাদের নেত্রনালি, চোখের মণি, অক্ষিগোলক এবং অশ্রুগ্রন্থিতে ধর্ষণকারীরা তাদের ধর্ষণযন্ত্রের উপর্যুপরি আঘাত ও অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সবকিছু ছিন্নবিচ্ছিন্ন এবং বিকল ও বিকৃত করে দেয়।

ধর্ষণকারীর দুর্গন্ধ এবং তাদের নোংরা কর্মের বীভৎস রূপসংবলিত দূষিত বায়ু আমাদের নাসিকা গহ্বরকে ধর্ষণ ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলে। যারা পরিবেশ দূষণ ঘটায় এবং বায়ুমণ্ডল দূষিত করে ফেলে তারা প্রকারান্তরে আমাদের অন্যতম ইন্দ্রিয় নাসিকা, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, রক্তনালি ও মস্তিষ্ককে ধর্ষণের জন্য দায়ী। খাদ্যে ভেজালকারী এবং শব্দসন্ত্রাসীরা আমাদের নাক, কান, গলা, চক্ষু ইত্যাদি শেষ করে দেয়। মন্দ শব্দ উচ্চারণকারী এবং মন্দ কর্ম দ্বারা আমাদের অসহায় ও জিম্মি বানিয়ে ফেলা গোষ্ঠীটি আমাদের চিত্ত-মন এবং মস্তিষ্ককে ধর্ষণ করে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত বানিয়ে ফেলে। যারা অহংকার, দাম্ভিকতা, অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতন দ্বারা পৃথিবী কলুষিত করে তারাও বাংলা ব্যাকরণমতে ধর্ষণকারী হিসেবে অভিহিত।

ধর্ষণের ত্রিমাত্রিক প্রয়োগের বহুমাত্রিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র অনেক সময় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়। এই পৃথিবীর আজকের সভ্যতার প্রধান প্রাণশক্তি হলো মানুষের অভিনব উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি, কাজ করার প্রেরণা এবং বেঁচে থাকার আগ্রহ। ধর্ষিত নর-নারীর জন্য পৃথিবী বিষময় হয়ে ওঠে। তারা বাঁচতে চায় না। কিংবা বেঁচে থাকলেও তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, সৃজনশীল রুচিময়তা এবং পরিশ্রম করার আগ্রহ চলে যায়। অন্যদিকে ধর্ষণকারী বা গোষ্ঠীরও এই তিনটি গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তারা ধর্ষণ রোগে আক্রান্ত হয়ে বার বার অভিনব নির্মমতা ও ছলচাতুরী নিয়ে নতুন ধর্ষণ ক্ষেত্র আবিষ্কার এবং ধর্ষণশয্যা রচনা করার জন্য কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে মানুষ থেকে অমানুষ এবং আরও কিয়ৎকাল পরে প্রেতাত্মায় পরিণত হয়।

ধর্ষণকারীর কোনো জাত-পাত, রুচিবোধ বা কৌলীন্য থাকে না। তার রুচি, বিবেকবোধ, জ্ঞানবুদ্ধি সর্বত্র ধর্ষণের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তাতে পচন ধরে এবং রীতিমতো দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। ধর্ষণকারীর কাছে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা অথবা আত্মীয়-পরিজন কেউই নিরাপদ নয়।

ক্ষুধার্ত হিংস্র জানোয়ার যেমন আপন সন্তানকে খেয়ে ফেলে তেমনি ধর্ষণকারীর হিংস্র থাবা, বিষাক্ত লালাযুক্ত জিব এবং লালসায় লিকলিক করা চোখ থেকে আপন রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-পরিজনও নিরাপদ নয়। তারা জন্ম নেয় ধর্ষণ করার জন্য, বেঁচে থাকে ধর্ষণের জন্য এবং মারাও যায় ধর্ষণের কারণে। ফলে প্রতিটি বিবেকবান শাসক, সব শ্রেণির ধর্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ জনগণকে রক্ষা করেছিল। ইতিহাসের মহারাজা অগাস্টাস সিজার, জাস্টিনিয়ান কিংবা ইসলামের মহান দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে সর্বজনীন ধর্ষণকারীদের দাপট সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল। এসব মহান শাসক সবার আগে মানবিক ধর্ষণ বন্ধ করেছিলেন যার অব্যবহিত পরিণতিতে শারীরিক ধর্ষণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিল।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও