বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

মার্চ ১৮ ২০২১, ১৯:৪০

Spread the love
আগমনী ডেস্কঃ বর্ণিল আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গতকাল বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক রাষ্ট্রীয় ১০ দিনের আয়োজন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার সঙ্গে এই আয়োজনে অতিথি ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ এবং ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদ। সশরীরে না থাকলেও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ছিলেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদো সুগা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সাংবাদিক স্যার মার্ক টালি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবই, ইনশা আল্লাহ। এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা। স্বাধীনতার অর্ধশতক পরও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যে সক্রিয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করে দেশকে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য  নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা। সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই অর্জিত হয় স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, তার ওপর শত শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি, শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের এ জনপদকে একটা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার মতো কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। অসাধ্য সাধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অনেক স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশকে তিনি উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে  চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট তাঁকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনো দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি।

‘মুজিব চিরন্তন’- এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সফররত মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পাঠানো চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদো সুগা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক স্যার মার্ক টালির ভিডিও বার্তার মাধ্যমে পাঠানো বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।বিকাল সাড়ে ৪টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগেই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানস্থলে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও তাঁর পত্নী রাশিদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত ও অভ্যর্থনা জানান। এর কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ সফররত মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ স্ত্রী ম্যাডাম ফাজনা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এলে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১০০ শিশু-কিশোরী শিল্পীদের উপস্থাপনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ১০ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তারা তিনটি গান পরিবেশন করে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর ‘মুজিব চিরন্তন’- মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে নির্মিত টাইটেল এমিনেশনের ভিডিও চিত্র পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চৌকস অফিসাররা আকাশে অসংখ্য বিমানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘১০০’ লেখা ফুটিয়ে তোলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ, বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও