রমজানে বিক্রি বেড়েছে আতর-টুপির

এপ্রিল ০২ ২০২৩, ১৭:৫০

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ : সিয়াম সাধনার মাস রমজান। রমজান এলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবাদতে মসগুল থাকেন। অন্য সময় যারা মসজিদে নামাজ পড়েন না, তারাও রমজানে নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবী পড়ে আতর টুপি লাগিয়ে নামাজ পড়েন ও আল্লাহর নামের তজবি পড়েন। সারা মাসব্যাপীই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভীড় লেগে থাকে মসজিদে। রোজা শেষে ঈদের আগেরও নতুন পায়জামা পাঞ্জাবী বানানো ও সাধ্যমত কেনার হিড়িক পড়ে যায়। দর্জির ঘওে ভীড় পড়ে যায়। বাহারী টুপি কেনারও ধুম পড়ে যায় মার্কেটগুলোতে। আতর টুপি বিক্রেতারা সারা বছর তেমন একটা ব্যবসা না করতে পারলেও রমজান ও ঈদেও বেচাকেনায় খুশি তারা।

খামারপাড়া দারুল উলুম ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম আবু হানিফ মাওলানা বলেন, রমজানে যেভাবে মানুষ এবাদত করে, সারা বছর যদি মসজিদগুলো এমন মুসল্লি থাকত, তাহলে অনেক ভাল লাগত। মাহবুব নামের এক আতর টুপি বিক্রেতা বলেন, আমার লাভের জন্য বলছি না, সারা বছর যদি মুসল্লিরা এভাবে নামাজ রোজাসহ আল্লাহর এবাদত করত, আতর টুপি ব্যবহার করত, মনে হয় দেশে কোনো অন্যায় অবিচার থাকত না।

রমজানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় বেশিরভাগ সময়ই ইবাদত বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকেন মুসুল্লিরা। সে সুবাদেই চাহিদা বাড়ে নতুন টুপি, আতর, সুরমা, তসবিহ, জায়নামাজ, মেসওয়াক ও ধর্মীয় বইপুস্তকের।

এদিকে সারাবছর আতরের তেমন চাহিদা না থাকলেও রমজান ও ঈদের সময় এটি বিক্রি বেশি হয় বলে জানালেন মসজিদের দক্ষিণ গেটের আতর বিক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে রমজানের সময় দেশি-বিদেশি আতর দোকানে রাখার চেষ্টা করি। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, দুবাই, ভারত ও ফ্রান্সের আতর পাওয়া যাচ্ছে চাহিদা মতো। বেশিরভাগ দোকানে আতর বিক্রি হচ্ছে তোলা হিসাবে।

একেক টুপির একেক রকমের ডিজাইন। কোনটা লাল, কোনটা নীল। কোনটা আবার দুটো রঙের সংমিশ্রণে। তবে সব ধরনের টুপির মধ্যেই সাদা রঙের প্রাধান্যটাই বেশি। আছে নতুনত্বের ছোঁয়াও। বাহারি রঙের কাপড় ও সুতার ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন টুপিতে। কোনোটা হাতে নকশা করা, কোনোটা প্রিন্ট করা, কোনোটা আবার একেবারে সাদামাটা।

এসব টুপির আবার আছে বিভিন্ন নামও। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে আছে আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের টুপি।

আরও রয়েছে পাকিস্তানের পাথরি, কাটা, সিন্ধি, হাজি ও রোমিথ টুপি। আর এসব টুপি পাওয়া যাবে ২শ’ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। তবে টুপির বাজার ঘুরে দেখা দেখা গেছে, ক্রেতাদের মধ্যে গোল ও কিস্তি টুপির চাহিদাই সবথেকে বেশি।

রমজানে উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। রোজা শুরু হতে না হতেই ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে নিয়েছেন বিভিন্ন ঘরানার টুপি দিয়ে। তবে চাহিদাও যে একেবারে কম তা নয়। হাতের কাজ করা গোল টুপি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
ফুটপাতের সাধারণ টুপির দাম আছে সবার নাগালেই। এগুলোর দাম ১০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের বাহারি রঙের টুপি পাওয়া যাচ্ছে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়।

গাউছিয়া মসজিদ মার্কেটের টুপি বিক্রেতা আরমান বলেন, টুপির চাহিদা সবচেয়ে বেশি ঈদের সময়। তবে রোজার প্রথম দিকেও বিক্রি বেশ ভালো হয়। ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে তাদের পছন্দমতো বাহারি টুপিগুলোই এবার রাখা হয়েছে দোকানে।
ইসলাম স্টোরের স্বত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম জানান, জায়নামাজের ক্ষেত্রে সুতির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দামি জায়নামাজ খুব বেশি বিক্রি হয় না। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মাঝারি দামের জায়নামাজগুলো। সাধারণ ক্রেতারা এসব জায়নামাজই বেশি পছন্দ করেন।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিন্নতার ক্ষেত্রে আতরের দামেও কিছুটা পার্থক্য দেখা গেছে। সুগন্ধি আতরের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস, জেসমিন, রোজ ও দিলরুবা বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৫শ’, রেড রোজের তোলা ১৫০০-১৭০০, এরাবিয়ান বেলি ১২০০-১৪০০, মর্নিং কুইন ১৮০০-২০০০, আসওয়াদ ১১০০-১৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাইলাতি ও মমতাজ ১৩০০-১৫০০, দরবার, এনজেল ও জমজম আতর বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। ভারতের বেলি ৫শ’-৭শ’, ব্লু লেডি, ব্লু ফোরম্যান ৬শ’-৮শ’, কুলম্যান ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আতরের মধ্যে হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, বেলি ও নাইট ফ্লাওয়ার বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়।
মসজিদ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মুরব্বিরা মেসওয়াক, সুরমা ও তসবিহ কিনছেন। জৈতন ও নিমের মেসওয়াক বিক্রি হচ্ছে ১০-৪০ টাকায়।

মেসওয়াক বিক্রেতা আলম মিয়া বলেন, মেসওয়াক ব্যবহার করা নবীর সুন্নত। তাই ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা এসব পণ্য কিনছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় মসজিদ, মাদ্রাসা, মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোর সামনের ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে টুপি, জায়নামাজ, আতর, সুরমা ও তসবিহ। এ বেচাকেনা চলবে ঈদের নামাজের আগ মূহূর্ত পর্যন্ত।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও