রূপগঞ্জের কলার আড়তে কার্বাইড স্প্রে করে চার ঘন্টায় পাকাচ্ছে কলা

জুন ০৮ ২০২১, ১৪:১০

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ কলা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফল হওয়ায় সর্বত্রই কলার ব্যাপক চাহিদা। আর এটাকে পুঁজি করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক ও কাঁচা কলায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক কার্বাইড স্প্রে করার ফলে মাত্র চার ঘন্টায় সবুজ কলা হয়ে যায় হলুদ। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো এসব কলা মানবদেহের জন্য মারত্মক ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও স্বাচ্ছন্দ্যে বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অধিক মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা দিনকে দিন এই অপরাধমূলক কর্মকা- করলেও প্রশাসনের নজরে আসে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া, ভুলতা, আব্দুল হক সুপার মার্কেট, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, সাওঘাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের গা ঘেঁসে মীর মার্কেটে অবস্থিত কলার আড়তগুলোতে এমন বিষক্রিয়াযুক্ত ভেজাল কলা পাইকারি বিক্রি করতে দেখা যায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব কলা পাইকারি কিনে নিয়ে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছে। কলাগুলো দেখতে আকর্ষণীয় ও লোভনীয় রঙের হলেও প্রতিটি কলা বিষে ভরা। ফলে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ক্রেতা বা ভোক্তারা। আরো জানা যায়, কলার কাদি কাটার আগে পর্যন্ত ভাইরাস তাড়ানোর নাম করে স্প্রের মাধ্যমে নানা কীটনাশক ছড়ায় কলা চাষীরা।

এমনকি কলাগুলো রূপগঞ্জ উপজেলাতে প্রবেশের আগে স্প্রের মাধ্যমে প্রফিট, মার্শাল,হিলডন, রাইজার, বাসুডিন, ইথিলিন, রাইপেনসহ নানা ধরনের কীটনাশক মেশানো হয়। এভাবে দফায় দফায় কেমিক্যাল মিশানোর ফলে কলার পুষ্টি ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমানে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো কলা খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, ডায়াবেটিস, জন্ডিস, গ্যাস্টিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনির সমস্যার মতো জটিল রোগের শিকার হচ্ছে তারা। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এমনকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে। এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে রূপগঞ্জের সচেতন মহল। তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করেছে। বিষযুক্ত এসব কলার স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর জাহান আরা খাতুন বলেন, কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব কলা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব কলা খাওয়ার সাথে সাথে বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের পর তা দাহ্যে পরিণত হয়ে নিঃসারণ ঘটে লিভার ও কিডনির মাধ্যমে। এই কেমিক্যালের প্রভাবে গর্ভবর্তী নারীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এমনকি গর্ভজাত শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে। তাই এসব খাবার পরিহার করার পরামর্শ এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।

রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনা (ভূমি) আতিকুল ইসলাম বলেন, কলার মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো গুরুতর অপরাধ। কেউ যদি এ ধরনের অপরাধ করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান এ ব্যাপাওে বলেন, এখন মধু মাস চলছে। আমাদের দেশীয় ফলের পচুর সমারোহ রয়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। এ সময় বিভিন্ন ধরনের ফলে কার্বাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশানো হয়। আমাদের প্রশাসন এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। হাট বাজারগুলোতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরও এ ধরনের কাজ কেউ করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও