হাতীবান্ধায় ছেলের চুরির অপবাদে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বেধে রেখে চেয়ারম্যানের নির্যাতন

ফেব্রুয়ারি ০৭ ২০২১, ২০:৪৭

Spread the love

তমাল কান্তি রায়,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃলালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ছেলের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ তুলে আকবর আলীওরফে ধনী (৮০) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দড়ি দিয়ে বেধে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এর আগেও চেয়ারম্যানের ওই বাড়িতে এক যুবুককে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় মাতব্বরা।কিন্তু অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবিতে  বিকেলে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।

এ দিকে এ ঘটনায় শনিবার (৬ ফেব্রæয়ারি) রাতে ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন ও গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আকবর আলী ওরফে ধনী। এরআগে শনিবার (৬ ফেব্রæয়ারি) সকালে উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের জাওরানী এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটেছে।নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী উত্তর জাওরানী গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া সে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। আর অভিযুক্ত মহির উদ্দিন ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
জানাগেছে, ওই ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনীর ছেলের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ তুলে গ্রাম পুলিশ মুক্তিযোদ্ধার নিজ বাড়ি থেকে জোড় করে তুলে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে। এরপর চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশ মিলে জোড় পূর্বক ওই মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে রাখেন।এরপর চলে নির্যাতন। বিষয়টি নিয়ে জানা-জানি হলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমোলচনার সৃষ্টি হয়। এর এক পর্যায়ে স্থানীয় ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের
চাপে মুক্তিযোদ্ধা ধনীর হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। এরপর ওই রাতে ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন ও গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী বলেন, আমার ছেলে নাকি গরু চুরি করেছে। এমন অভিযোগ তুলে আমার বাড়িতে এসে চেয়ারম্যান ও চৌকিদার জোর পূর্বকআমাকে তুলে নিয়ে যায়। কোন কিছু না বলেই চেয়ারে বসিয়ে দড়ি দিয়ে হাত বেধে ফেলে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকি বলেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন তিনি। চোখের জল মুচতে মুচতে তিনি শুধু একটাই কথা বলেন দেশ স্বাধীন করে শেষ বয়সে আমি এই পেলাম। আমি এর সঠিক বিচার চাই। তাই থানায় অভিযোগ করেছি।

এ বিষয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন বলেন,মুক্তিযোদ্ধাকে কোন মারধর করা হয়নি। তার ছেলে গরু চোর সে জন্য তাকে ডাকাহয়েছিলো। আপনি পরিষদ বাদ দিয়ে নিজ বাড়িতে বিচার সালিশ করে কেন? এমন
প্রশ্ন করা হলে তার কোন সদুত্তোর মেলেনি। এর আগেও আপনার ওই বাসায় এক যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টা করেন এমনপ্রশ্ন করা হলে তারও কোন উত্তর দেননি তিনি।এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন,অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তের জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৬ মে নুরুজ্জামান নামে এক যুবককে চেয়ারম্যানের ওই বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টা করেন চেয়ারম্যানের ছেলে জাহাঙ্গীর ও ভাই মনসুর হেলাল। আর সেই ঘটনার মামলায় বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। এ দিকে গত বছর ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৩জন গ্রাম পুলিশ মাদকদ্রব্য নিয়ে পুলিশের নিকট আটক হয়। তাদের মামলা চলমান রয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও