দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়া সেই ছেলেটিই আজ বিশ্বকাপ সেমিতে

জুলাই ০৭ ২০১৮, ১৫:৪৬

Spread the love
ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, ফুটবল একটি আবেগের নাম, ফুটবল একটি ভালোবাসার নাম। এই ভালোবাসার পেছনে লুকিয়ে থাকে অজস্র না বলা গল্প। বেলজিয়ান ফুটবলার রোমেলু লুকাকুর জীবনেও আছে এমন এক মর্মস্পর্শী গল্প, নিশ্চিতভাবেই যা ছুঁয়ে যাবে সকল ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়।

গত মৌসুমেই রেকর্ড ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল ও ধনী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন লুকাকু। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি এখন বিপুল অর্থের মালিক, দেশের হয়ে অংশ নিচ্ছে বিশ্বকাপেও। কিন্তু ছোটবেলায় এমন কিছুর স্বপ্ন দেখা লুকাকুর জন্য ছিল ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার শামিল। মুখে খাবার জোটেনা যে পরিবারে, সেই পরিবার থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক ফুটবল কাঁপানো তো রীতিমত রুপকথারই শামিল।

উত্তর বেলজিয়ামের অ্যান্টর্পে জন্ম রোমেলু লুকাকুর। বেলজিয়ামে জন্ম হলেও লুকাকুর বাবা-মা দুজনেই ছিলেন কঙ্গোর। তবে তাঁর বাবা রজার লুকাকুর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন আফ্রিকান দেশ জায়ারের অধিবাসী। পেশাদার ফুটবলার রজার আন্তর্জাতিক ফুটবলও খেলেছেন জায়ারের হয়ে। কিন্তু ফুটবল খেলে জীবন ধারণের মতো অর্থ উপার্জন করতে পারছিলেন না রজার।

সংসার চালাতে তাই পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করতে হতো লুকাকুর মা অ্যাডোলফিনকে। কিন্তু তাতেও সংসারের অসচ্ছলতা দূর হয়নি লুকাকু পরিবারের। অভাব এতটাই তীব্র পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল, পেট ভরানোর জন্য লুকাকুকে দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খাওয়াতেন তাঁর মা! স্থানীয় বেকারি থেকে ধার করে এনে ছেলে লুকাকুকে রুটি খাওয়াতেন মা অ্যাডোলফিন।

ছয় বছর বয়সেই দারিদ্র্যের এমন নিষ্ঠুর রুপ দেখে ফেলা লুকাকু এখনও মনে করতে পারেন শৈশবের সেই দুর্বিষহ স্মৃতি, ‘আমি ওই বয়সেই জানতাম আমাদের সংসারের অবস্থা খুব একটা ভালো না। কিন্তু যেদিন আমার মা আমাকে দুধের সাথে পানি মিশিয়ে খেতে দিলো, যাতে করে পেট বেশিক্ষণ ভরা থাকে, সেদিন আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। বুঝতে পারছেন আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা কোন পর্যায়ের ছিল? আমরা শুধু দরিদ্র্যই ছিলাম না, আমরা একদম নিঃস্ব ছিলাম।’

‘আমি সেদিন আমার মাকে একটা কথাও বলিনি। চুপচাপ খাবারটা খেয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেদিনই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছিলাম, আমার মাকে এভাবে কষ্ট করতে দেব না আমি। আমি আমার মাকে অভাবে দেখতে পারতাম না, কিছুতেই না। দারিদ্রতা যেন আমার গালে জোরে একটা চড় দিয়ে গিয়েছিল সেদিন, আমাকে জাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। আমি ঠিক তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, আমাকে কী করতে হবে।’

নিজের মানসিক শক্তিমত্তার উৎসও যে এই দারিদ্র্য, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন লুকাকু, ‘ফুটবলে অনেকেই মানসিক শক্তিমত্তা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। সত্যি বলতে, আমার চেয়ে মানসিকভাবে বেশি শক্ত এমন ফুটবলার আপনি খুঁজে পাবেন না। কারণ আমি আমার মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে জীবনের অন্ধকার দিকটা পার করে এসেছি। অন্ধকারে বসে কেবল প্রার্থনা করে এসেছি। আর নিজের উপর বিশ্বাস রেখে গিয়েছি। মাঝে মাঝে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখতাম মা কাঁদছে। একদিন আর সহ্য করতে না পেরে মাকে বলেছিলাম, “মা দেখো, একদিন এই অবস্থা ঠিক বদলে যাবে। আমি একদিন আন্ডারলেখটের হয়ে ফুটবল খেলব, খুব শীঘ্রই খেলব। আমাদের তখন অনেক টাকা হবে। তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না তখন।’

লুকাকু তাঁর কথা রেখেছেন। বেলজিয়ামের অন্যতম সেরা ক্লাব আন্ডারলেখটে তো খেলেছেনই, চেলসি, এভারটনের মতো ক্লাব ঘুরে লুকাকু এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়! দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেয়ার ভারও বইছে লুকাকুর দুটি কাঁধ। সময়, ভাগ্য, পরিশ্রম আর নিজের উপর বিশ্বাস একজন মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে, তার আদর্শ উদাহরণ বোধহয় লুকাকুই।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও