খেলার মাঠে মার্কেট! এ যেন মানব দেহে প্রাণ থাকতেও অসার

সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২১, ১৯:১০

Spread the love

খুররম মুরাদ- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ সময়টা তখন ১৯৯৪ সাল যখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইস্ট এন্ড ক্লাবের অনেক নাম ডাক ছিল চারিদিকে। সেই ক্লাবেরই এক আয়জনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে। তিনি খেলার মাঠটিকে তিনভাগে ভাগ করে এক ভাগ ইস্ট এন্ড ক্লাব এক ভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) এবং এক ভাগ সিটি কর্পোরেশনকে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির কথাই সর্বস্বীকৃত আইন ধরে নিজেদের নামে মাঠগুলা পরিচালনা করছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন সিটি কর্পোরেশন দাবি করেছে যেহেতু মাঠগুলা সিটি কর্পোরেশনের নামে রয়েছে তাই তারা সেই অধিকার থেকে মাঠের জায়গায় মর্কেট তৈরি করবে।

স্থানীয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে তারা বলে তিনটি মাঠের জায়গায় একটি রাখবে এবং বাকি দুইটি মাঠের জায়গায় বিশাল মার্কেট বানাবে, ইতোমধ্যে কার্যক্রমও শুরু করেছে তারা।

আমার কাছে মনে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত এটি। কেননা পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসতি, দম ফেলার জায়গা নেই সেই সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে নিয়মিত খেলাধুলা করে। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা আয়োজন এই মাঠেই সম্পন্ন হয়। যদি এই মাঠটি চলে যায় তবে এই এলাকার ফুটফুটে শিশুরা বিকশিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে, হারাবে তাদের মধুর শৈশব। সেই সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা হারাবে তাদের বিনোদন ও সহ-শিক্ষাকার্যক্রম চর্চার জায়গাও। একটি হাসপাতালের চেয়ে একটি খেলার মাঠের গুরুত্ব কম নয়। বড়দের মুখে এমনটাও শুনেছি, যে কোন এলাকায় যদি একটা খেলার মাঠ থাকে আর সেখানে নিয়মিত খেলাধুলা হয়, সেই এলাকায় হাসপাতালেরই দরকার হয় না।

শারিরীক শক্তি ও মানসিক চিন্তা-চেতনা, বুদ্ধিমত্তা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো খেলাধুলা। মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামাল বলেন, খেলাধুলা বা ছোটাছুটি করতে না পারা শিশুরা পরবর্তিতে নানা সমস্যায় ভোগে। খেলার মাঠের গুরুত্ব অনেক তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে কমিউনিকেশন তৈরি করা। সাধারনত দেখা যায় একটি মাঠে নানা বয়সের মানুষের আসা-যাওয়া থাকে, ফলে বিভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে যোগাযোগের সুযোগ থাকে, এর ফলে একটি শিশুর বা মানুষের নেতৃত্ব দেওয়ার গুনাবলি অর্জন হয়। এছাড়াও মাঠের খেলাধুলা স্মার্টফোন আসক্তি থেকে দুরে রাখে।

উঠতি বয়সের যারা রয়েছে তারা মাঠের আভাবে খেলাধুলার সথেষ্ট সুযোগ না পেয়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে, যা পরিবার, সমাজ তথাপি রাষ্ট্রের জন্য হুমকির। মাঠের অভাবে যখন একটা জাতি ক্ষতির দিকে ধাবিত হয়, তখন আমরা জানতে পারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাঠের জায়গায় মার্কেট করবে। হায়! আমরা এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার গুরুত্ব না বুঝে স্বার্থের কাছে বলি দিচ্ছি, অর্থের কাছে মাথা নত করে বলছি তুমিই সব। এটা ভেবে অনেক কষ্ট হচ্ছে, যেসব এলাকায় খেলার মাঠগুলো অন্যকাজে ব্যাবহৃত হচ্ছে, সেসব এলাকার মানুষরা হাত-পা থেকেও হবে পঙ্গু এবং বুদ্ধি থেকেও হবে নির্বোধ।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও