দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনে মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত

অক্টোবর ০৩ ২০২২, ১৭:৫৯

Spread the love

এনামুল মবিন(সবুজ) স্টাফ রিপোর্টারঃ শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনে আরতি, অঞ্জলি দান ও প্রসাদ বিতরনের মধ্যদিয়ে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছরের ‘কুমারী দেবী’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ‘সঞ্চারী চক্রবর্তী’ কে।

সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপ উপলব্ধি করতেই এ পূজার আয়োজন হয়। সাধারণত ১৬ বছরের কম বয়সী কন্যা শিশুদের মধ্যে থেকে ‘দেবীত্বের লক্ষণ বিচার করে’ কুমারী নির্বাচন করেন পুরোহিতরা। শাস্ত্রমতে তার একটি নামও দেওয়া হয়। এবারের ‘কুমারী দেবী’র নাম রাখা হয় ‘মালিনী’।

সোমবার (৩ অক্টোবর) সকালে দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনে কুমারী পূজা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম(এমপি)।

দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনে ঘড়ির সময় ঠিক ৯টায় কুমারী পূজা শুরু হয়। পূজা শুরু করেন পুজারী সঞ্জয় চক্রবর্তী সঙ্গে ‘তন্ত্রধারক’ ছিলেন স্বামী সমানন্দ মহারাজ। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘কুমারী দেবী’কে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর তার পা ধুয়ে নিবেদন করা হয় অর্ঘ্য। কুমারী পূজার ১৬টি উপকরণ দিয়ে শুরু হয় পূজার্চনা। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস্ত এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী মায়ের’ পূজা। অর্ঘ্য নিবেদনের পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। পূজা শেষে প্রধান পূজারি আরতি দেন এবং তাকে প্রণাম করেন। সবশেষে মন্ত্রপাঠ করে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে শেষ হয় কুমারী পূজা।

এবারের কুমারী পূজায় ‘কুমারী’ ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলার কালিবাড়ী এলাকার জয়দেব চক্রবর্তী ও সঙ্গীতা চক্রবর্তী দম্পত্তি’র ৭ বছর বয়সী শিশু কণ্যা ‘সঞ্চারী চক্রবর্তী’। সঞ্চারী ঠাকুরগাঁও বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

কুমারী পূজা পরিদর্শনে এসে হুইপ ইকবালুর রহিম(এমপি) বলেন, অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা সংগ্রামে মহান মুক্তিযুদ্ধের মুসলমানরা শুধু নয়, সকল ধর্মের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে এ দেশ স্বাধীন করে গেছেন। এই দেশকে আমরা সকলেই একসঙ্গে গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দারিদ্র্যমুক্ত এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই শেখ হাসিনার লক্ষ্য। আজকে বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। সব ধর্মের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করে আসছেন। শান্তিতে ও নিরাপদে আনন্দ উৎসব করে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। কেউ বাধা সৃষ্টি করছে না। আর এটা সম্ভব হয়েছে শেখ
হাসিনার জন্য।

দিনাজপুর রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রম এর অধ্যক্ষ স্বামী বিভাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, মহা অষ্টমীতে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে কুমারী কন্যাকে মাতৃরূপে অঞ্জলী দেয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা, যার নাম কুমারী পূজা। সাধারণত ১৬ বছরের কম বয়সী কন্যা শিশুদের মধ্যে থেকে ‘দেবীত্বের লক্ষণ বিচার করে’ কুমারী নির্বাচন করেন পুরোহিতরা। স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের শিখিয়েছেন ‘ শিবজ্ঞানে জীব সেবা। অর্থাৎ মানুষের মধ্যেই ভগবান আছেন। আর কুমারী হলো একটি পবিত্র মুর্তি, যার মধ্যে কোন কলসতা প্রবেশ করেনি। এমন কুমারীর মধ্যে মায়ের আবির্ভাব মনে করে আমরা কুমারী পুজা করে থাকি। আর এথেকে মানুষকে শ্রদ্ধা করার একটি ভাবনা চলে আসে। প্রতি বছর পুজায় প্রায় বিপুল সংখ্যক ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হয় এই আশ্রম ও মিশনে এবং তাদের প্রত্যেকের মাঝে প্রসাদ বিতরন করা হয়। এখানে দেশ, জাতি ও পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কল্যান কামনা করে বিশেষ প্রার্থনাও করা হয়।

কুমারী পুজা দেখতে আসা ভক্তবৃন্দ বলেন, নারী শক্তি জাগ্রত করা এবং মেয়েদের প্রতি সম্মান যাতে আরো বাড়ে এজন্য সকল মেয়েকে ইঙ্গিত করে এই কুমারী পুজা করা হয়। আর দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমের কুমারী পুজা অনেক জাকজমকপুর্ন ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তাই আমি প্রতি বছরই এই আশ্রমে কুমারী পুজা দেখতে আসি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্তুজা আল মুঈদ, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যাান রবিউল ইসলাম সোহাগ, শহর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ রায়হান কবীর সোহাগ, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মোঃ মমিনুল ইসলাম, শহর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. শামীম আলম সরকার বাবু, শহর যুবলীগের সভাপতি মোঃ আশরাফুল আলম রমজান প্রমুখ।

এদিকে কুমারী পূজা সুষ্ঠুভাবে পালনের ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও