আসামের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া শ্রমিকদের দিয়েই নির্মিত হচ্ছে আসামের বন্দিশিবির
আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকত্ব তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়া শ্রমিকদের দিয়েই নির্মিত হচ্ছে বন্দিশিবির। নির্মাণাধীন বিশালাকার বন্দিশিবিরের নির্মাণ শ্রমিকরাই আটকের আশঙ্কায় সময় পার করছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
রয়টার্স আটক কেন্দ্রের নির্মাণ শ্রমিক ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে এর বিশদ একটি চিত্র পেয়েছে। এই শ্রমিকদেরই কেউ কেউ জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে যে বিতর্কিত নাগরিকপঞ্জি আসাম সরকার প্রকাশ করেছে, তাতে নাম নেই তাদের। এর মানে- নিজেদের নির্মাণ করা আটক কেন্দ্রেই বন্দি হতে যাচ্ছেন নির্মাণ শ্রমিকরা।
আটক কেন্দ্রের কাছাকাছি এক গ্রামের বাসিন্দা শেফালি হাজং নামে এক উপজাতি নারী জানান, নাগরিকপঞ্জিতে তার নাম আসেনি। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে যে ২০ লাখ লোককে জন্মসনদ ও জমির মালিকানার কাগজপত্র দাখিল করতে হবে সেই তালিকায় তিনিও রয়েছেন।
আটক কেন্দ্রের নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত শেফালি বলেন, আমার তো পেট ভরার প্রয়োজন। শেফালি তার প্রকৃত বয়স কত জানেন না। তবে তার ধারণা, ২৬ বছর হবে। কেন নাগরিকপঞ্জিতে তার নাম আসেনি, তা-ও জানেন না এই নারী। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন শেফালির মা মালতি হাজং। তিনি বলেন, আমাদের জন্মসনদ নেই।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গোয়ালপারা শহরের কাছে নির্মিতব্য আটক কেন্দ্রটির মতো অন্তত ১০টি আটক কেন্দ্র রাজ্যে নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, আসাম এমন একটি সংকটের প্রান্তে রয়েছে যেটি শুধু বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ও স্বাধীনতা হারানোর দিকে নিয়ে যাবে না, বরং তাদের মৌলিক অধিকারও মুছে ফেলবে, যার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আগামী প্রজন্মের ওপর।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকত্ব তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ। তালিকা থেকে বাদ পড়ায় রাজ্যটিতে ১৯ লাখ লোক রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আগামী ১২০ দিনের মধ্যে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে তাদের ঠাঁই হবে শরণার্থীশিবিরে।
বিদেশি ঘোষিত হওয়া লোকজনকে যদি বিতাড়ন করা নাও হয় বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হতে পারে। এছাড়া তারা নিজেদের সম্পত্তির দখল পাবে কিনা বা একজন নাগরিক যেসব সামাজিক সুবিধা পান সেগুলো পাবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
হতে পারে বন্দিশিবির থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের মৌলিক কিছু সুযোগ-সুবিধাসহ কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে। কিন্তু তারা আর ভোট দিতে পারবেন না।