স্বাস্থ্যের ড্রাইভার বাড়ি,ফ্ল্যাটসহ শতকোটি টাকার মালিক,র্যাবের হাতে গ্রেফতার
পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত। তবে মালেকের বিষয়ে তদন্তে নেমে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। তারা বলছেন, নজরদাড়ি এড়াতে দুর্দান্ত কৌশলী ছিলেন মালেক। তার নিজ নামে খুব একটা সম্পদ না থাকলেও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই ও আত্মীয়স্বজনদের নামে। তৃতীয় শ্রেণির সামান্য গাড়িচালক হলেও তার ক্ষমতার কাছে নতিস্বীকার করতেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পেশাদার সৎ কর্মকর্তারা। মালেকের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ দূরে থাক, তার কথার বাইরে গেলেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাস্তানুবুদ করে ছাড়তেন তিনি। তথাকথিত বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর প্রকাশ করে ফাঁদে ফেলতেন।সূত্র বলছে, মালেক দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী নারগিস আক্তার গৃহিণী। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম রাবেয়া খাতুন। তার আগের স্বামী মৃত ফিরোজ আহমেদ। সাবেক এক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএ হিসেবে কাজ করতেন।
যত সম্পত্তি : প্রথম স্ত্রী নারগিসের নামে তুরাগ থানায় দক্ষিণপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তর পাশে ছয় কাঠার ওপর সাত তলা (হাজী কমপ্লেক্স) আবাসিক ভবনে ২৪টি ফ্ল্যাট। ওই ব্লিডিংয়ের পাশেই রয়েছে ১০ কাঠার একটি প্লট। প্রথম স্ত্রীর মেয়ে বেবির নামে রয়েছে দক্ষিণ কামারপাড়া ৭০ রাজাবাড়ী হোল্ডিংয়ে ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ইমন ডেইরি ফার্ম নামে একটি বিশাল গরুর খামার। কলাবাগানের হাতিরপুলে পৈতৃক সাড়ে ৪ কাঠা জমির ওপর ১০ তলা নির্মাণাধীন ভবন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের নামে একটি সংগঠন তৈরি করে সেই সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন মালেক। কেবল ড্রাইভারদের নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতির নামে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালককে (প্রশাসন) জিম্মি করে ডাক্তারদের বদলি, পদোন্নতি, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন মালেক। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মেয়ে নওরিন সুলতানাকে কম্পিউটার অপারেটর, ভাই আবদুল খালেককে অফিস সহায়ক, ভাতিজা আবদুল হাকিমকে অফিস সহায়ক, বড় মেয়ের স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার, আত্মীয় কামাল পাশাকে অফিস সহায়ক, ভায়রা মাহবুবকে ড্রাইভার এবং ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার পদে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাকরি দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের গাড়িচালক হিসেবে তিনি কর্মরত। তবে নিজে গাড়িচালক হয়েও মহাপরিচালকের পাজেরো গাড়িটি হরহামেশাই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন।
যাদের সঙ্গে যোগাযোগ : স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অন্যতম আশ্রয়দাতা হিসেবে একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গেও তার দহরম মহরম ছিল। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কবির হোসেন চৌধুরী, মো. শাহজাহান ফকির, প্রধান সহকারী সৈয়দ জালাল, অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম হচ্ছেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। এ ছাড়া বিএমএ ও স্বাচিপের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহ মনির হোসেনের আমলে (২০০৯-১০) গাড়িচালক মালেক একাই শতাধিক নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।
গ্রেফতার মালেকের মেয়ে নাজনিন সুলতানা মিলি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তার বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে র্যাব গ্রেফতার করেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২০ দিন আগে তিনি আইসিইউ থেকে বাসায় ফিরেছেন।
র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, মালেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসায় জড়িত থাকা এবং অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে পৃথক দুটি মামলা হবে। তাকে রাজধানীর তুরাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে র্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত।