১ম সন্তান মারা যাওযার ৮ বছর পর ৪ সন্তানের জন্ম,দুধ কিনতে পারছেন না দিনমজুর বাবা
এনামুল মবিন(সবুজ)স্টাফ রিপোর্টারঃ দিনাজপুর বিরল উপজেলার ভান্ডারা গ্রামের সরকার পাড়া এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম ও মৌসুমি বেগম দম্পতি। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের কোল আলো করে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তবে জন্মের পরেই কোলশূন্য করে চলে যায় সেই সন্তান। দীর্ঘ ৮ বছর পর ওই দম্পতির কোলজুড়ে আসে তিন ছেলে ও এক কন্যাসন্তান। একসঙ্গে চার সন্তানের জন্মে খুশির সীমা ছিল না পরিবারে। তবে কদিন যেতে না যেতেই সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে। চার সন্তানের দুধ কেনা ও চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে দিনমজুর বাবা।
জানা যায়, শরিফুল ইসলাম একজন দিনমজুর। দৈনন্দিন কাজের মজুরি দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। সেখানে চার সন্তানের জন্য দুধ কিনবেন কীভাবে। এ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। বাচ্চাদের দুধের খরচ আর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দিনমজুর বাবা।
শরিফুল ইসলাম বলেন, বিয়ের এক বছর পর আমার একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান হয়েছিল। কিন্তু জন্মের পরপরই সে মারা যায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে ৮ বছর পর আমরা একসঙ্গে চার সন্তানের বাবা-মা হয়েছি। এতে আমার পরিবার ও এলাকাবাসী সবাই খুশি। কিন্তু আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে পরিবার চালাই। প্রতিদিন ৩০০- ৪০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। সেই টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বাচ্চাদের এক দিনের দুধ কিনতে খরচ হয় প্রায় ১ হাজার টাকা। তার সঙ্গে ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসপত্র তো আছে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম চড়া, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কয়েক দিন ধার-দেনা করে চালিয়েছি। এখন আর পারছি না।
তিনি আরও বলেন, বাধ্য হয়েই মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে বাচ্চাদের দুধ কিনছি। ডাক্তার বলছেন, বাচ্চাদের চোখের পরীক্ষা করাতে হবে। সব মিলে প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো লাগবে। এখনো সেই টাকার ব্যবস্থা করতে পারি নাই। তাই ডাক্তারের কাছে নিতে পারছি না। আমি সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমার বাচ্চাদের জন্য সহযোগিতা চাই।
মা মৌসুমি বেগম বলেন, বিয়ের পরের বছরে আমার মেয়ে সন্তান মারা যাওয়ার কষ্টটা বলে বুঝাতে পারব না। অনেক কষ্টে গেছে এই ৮টি বছর। একসঙ্গে আমাকে চারটা সন্তান দান করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। আমার প্রথম সন্তান মারা যাওয়ার কষ্ট ভুলে গেছি এদের মুখ দেখে। কিন্তু অভাবে সংসারে একটা সন্তান মানুষ করা যেখানে কষ্টকর, সেখানে চারটা সন্তানের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে আমার স্বামী ।
ভান্ডারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, শরিফুলের চারটি সন্তান হয়েছে। ও একজন শ্রমিক। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। চার সন্তানের দুধ ও চিকিৎসা চালানোর মতো সামর্থ্য নেই ওর। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করছি এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা করা হবে। আমি অনুরোধ করব, সমাজের বিত্তবান মানুষরা যেন শরিফুলের চার সন্তানের খাবার ও চিকিৎসার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই বুধবার বেলা ১১টার দিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে চার সন্তানের জন্ম দেন মৌসুমি বেগম।
শরিফুল-মৌসুমি দম্পতিকে সাহায্য করতে ০১৭৯৬-১০৭০১৭ (নগদ) নম্বরে যোগাযোগ করতে অথবা সহায়তা পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও পরিবারটি।