ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে সর্বাধুনিক বিলাসবহুল কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের উদ্বোধন করা হয়েছে। লঞ্চটি সর্বাধুনিক, সর্বোবৃহত ও উচ্চ গতিসম্পন্ন।বুধবার (২১ মার্চ) বিকেল ৫টায় বরিশাল নদী বন্দরে নোঙোর করা কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় অনুষ্ঠিত মিলাদ-মাহফিলের মাধ্যেমে এ লঞ্চের উদ্বোধন করা হয়।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এসএম রুহুল আমিন, উপ পুলিশ কমিশনার আ. রউফ, সালমা শিপিং কর্পোরেশনের সত্তাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস প্রমুখ।পরীক্ষামূলক চালনা সম্পন্ন করে রাতে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করবে লঞ্চটি। তবে চলতি মাসের ৭ মার্চে চরমোনাই মাহফিলকে কেন্দ্র করে যাত্রীসেবা দিয়েছে লঞ্চটি।সালমা শিপিং কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, বরিশাল নগরের কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন বাগেরহাট শিপ বিল্ডার্স নামক ডকইয়ার্ডে ৩১৫ ফুটের বেশি দৈর্ঘ ও ৫৯ ফুট প্রস্থের লঞ্চটি নির্মাণ করা হয়েছে। লঞ্চটিতে রয়েছে ১০২টি সিঙ্গেল, ৭০টি ডাবল ও ছয়টি ফ্যামিলি ক্যাবিন। পাশাপাশি রয়েছে ১৭টি ভিআইপি কেবিন।ভিআইপি কেবিনগুলোতে আলাদা বারান্দা, টয়লেট, ফার্নিচার, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল থেকে শুরু করে ভিআইপি পর্যন্ত প্রতিটি কেবিনেই আলাদা এলইডি টেলিভশন, বিলাসবহুল আসবাবপত্র রয়েছে।প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের কেবিনগুলোর সামনের প্রশস্ত ও সুবিশাল বারান্দা বা করিডোরকেও সাজানো হয়েছে বাহারি ধরনের নকশা ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে। নিচ তলার সুবিশাল ডেকে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলোকব্যবস্থার পাশাপাশি ৬০টির মত বৈদুত্যিক পাখা ও ডেকে একসঙ্গে ২৪৮ মোবাইল চার্জারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার পেছনে দিকেও রয়েছে ডেকের একটি অংশ। পুরো লঞ্চে যাত্রীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থাও।যাত্রী ছাড়াও দুই শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধা বিশিষ্ট লঞ্চটিতে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ (৩০ জন ধারণ ক্ষমতা), শিশুদের প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এরিয়া, খাবার হোটেল, বিনোদন স্পেস, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগ ব্যবস্থা।লঞ্চটির নিচতলায় সংযুক্ত করা হয়েছে করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও দুই শয্যার হাসপাতাল সেবা। পাশাপাশি লঞ্চের তৃতীয় তলায় সুবিশাল বারান্দা প্রশস্ত রাখা হয়েছে হাটার জন্য। যেখানে ডায়াবেটিস রোগীরা বিনা বাধায় হাটতে পারবেন।এছাড়া আধুনিক বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর মতোই কয়েক স্তর বিশিষ্ট তলদেশ ছাড়াও ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের জন্য লঞ্চটিতে জিপিআরএস সিস্টেম, রাডার, ইকোসাউন্ডার, ভিএইচএফ, ম্যানুয়াল ও ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সুকান স্থাপন করা হয়েছে। লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যবহার করবে ওয়াকিটকি।অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও আশপাশের নৌযানের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবে। তাছাড়া ঘন কুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে কীর্তনখোলা-১০।যাত্রীদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় আনসার সদস্য ছাড়াও দৃশ্যমান ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত লাইফ বয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।লঞ্চের ব্যবস্থাপক বেল্লাল হোসেন বলেন, সর্বোচ্চ যাত্রীধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নৌযানটি গত শুক্রবার কীর্তনখোলা নদীতে পরীক্ষামূলক ভাবে চলাচল করেছে। ত্রুটি ছাড়াই লঞ্চটি যে গতিতে চলেছে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী অন্যান্য লঞ্চের তুলনায় তা অনেক বেশি ছিলো।সালমা শিপিং কর্পোরেশনের সত্তাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানান, সালমা শিপিং করপোরেশনের তৃতীয় এবং সর্বাধুনিক লঞ্চটি দক্ষ মাস্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণির শতাধিক ক্রু নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীসেবায় নামানো হয়েছে।