‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন’প্রয়োগে করোনা চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে দুই বাংলাদেশি চিকিৎসকের সাফল্য

এপ্রিল ০৮ ২০২০, ১৯:১৩

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃযুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসজনিত অসুস্থতা নিরাময়ে স্বজনদের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে করোনা রোগীদের শরীরে  হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করেন বাংলাদেশি দুই চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আলম এবং ডা. রায়হান সাদি।এতে সাফল্যের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন দুই বাংলাদেশি চিকিৎসক। দেশটির ফেডারেল ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডডিএ) ছাড়পত্র না পেলেও ম্যালেরিয়া দমনকারী ওষুধ ‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন’ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সাফল্য পান তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে তাদের এই সাফল্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

মোহাম্মদ আলম নিউইয়র্ক সিটিসংলগ্ন লং আইল্যান্ডে প্লেইনভিউ হাসপাতালের সংক্রমিত রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকারী এবং দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন ফেডারেল স্বাস্থ্য বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন ডা. রায়হান সাদি।

লং আইল্যান্ডে প্লেইনভিউ হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮১ জন প্রবীণ রোগীর চিকিৎসা করেন মোহাম্মদ আলম। প্রত্যেকের শরীরেই তিনি ম্যালেরিয়া দমনের ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করেন। তার অধীনে থাকা লং আইল্যান্ডের ৩টি নার্সিং হোমেও ৪৭ রোগীর চিকিৎসায় এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এসব রোগীদের মধ্যে ৩৮ জনই সুস্থ হয়েছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন আছেন। তবে আগে থেকে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দু্ই রোগী মারা যান।

নিউইয়র্কের স্থানীয় পত্রিকা ডেইলি পোস্টকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন মোহাম্মদ আলম। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে এসে একেবারেই অসহায় বোধ করেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় আমি নিজে থেকে ভেবেছি, কিছু একটা করা দরকার। বয়স্ক রোগীর আকুতিকে মনে করেছি নিজের বাবার মতো। যে কারণেই নিজে থেকে কিছু করার পদক্ষেপ নিয়েছি।

গত ৪ এপ্রিল ‘লং আইল্যান্ড ডক্টর ট্রাইজ নিউ টুইস্ট অন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ফর অ্যাল্ডার্লি কভিড-১৯ প্যাশেন্টস’ শিরোনামে সংবাদটি  প্রকাশ করে নিউইয়র্ক পোস্ট। যেখানে আলম আরও বলেছেন, আমরা আগেই এফডিএ থেকে জেনেছি, এজিথ্রোমাইসিনর প্রয়োগের ফলে হৃদযন্ত্রেও ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাইনি। এ অবস্থায় আমি সিদ্ধান্ত নেই, এই ওষুধের (এজিথ্রোমাইসিনর) প্রয়োগ করব না। নার্সিং হোমের সীমিত সম্পদ নিয়েই আমরা মরণাপন্ন রোগীর জন্য কিছু করার পদক্ষেপ নেই। আমি রোগীদের শরীরে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করার পর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী মোহাম্মদ আলম আরও বলেন, আমার রোগীর ৪৫ জনই ছিলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তারা উচ্চমাত্রায় জ্বরের পাশাপাশি শ্বাস নিতে পারছিলেন না, সঙ্গে ছিল কফ-কাশির যন্ত্রণা।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগের আগে রোগীদের স্বজনের কাছে লিখিত অনুমতি নেন ড. আলম। কারণ, ওই ধরনের ওষুধ প্রয়োগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ফেডারেল ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এফডিএ কোনো ছাড়পত্র দেয়নি।

ড. আলম বলেন, আমার রোগীর সিংহভাগই সেরে উঠেছেন। আমরা খুবই স্বস্তি পাচ্ছি। ৪৭ রোগীর ৩৮ জনই করোনাভাইরাস মুক্ত হয়েছেন। ৭ জনকে নিকটস্থ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। মারা গেছেন অপর দুজন। এই চিকিৎসা-ব্যবস্থার ওপর গভীর পর্যবেক্ষণের অবকাশ রয়েছে। আরও বেশি খতিয়ে দেখা জরুরি। তারপরই এর সুফল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। তবে দিন শেষে আমি স্বস্তিবোধ করছি, হাসপাতালের অনেক অনেক বেড (আইসিইউ) বাঁচিয়েছি। ভেন্টিলেটরের স্বল্পতার জটিলতা পরিহার করা গেছে।

কুয়ান্টাইরা হেলথ সিস্টেমে কর্মরত আছেন ড. রায়ান সাদি। সংক্রমিত রোগ বিশেষজ্ঞ সাদি পড়াশোনা করেছেন ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে এবং সেখানেই প্রশিক্ষিত হন। তিনি বলেন, এ ওষুধ প্রয়োজনে সমন্বয়ের ব্যপারে আমি খুবই আশাবাদী। তবে তার আগে আরও বেশি পড়াশোনার দরকার আছে। ড. আলমের মতো পদক্ষেপ নিয়ে তিনিও কজন রোগীর চিকিৎসা করে সাফল্য পেয়েছেন।

পাবনার সন্তান সাদি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করার পর ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর শিক্ষায় ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি মার্কিন ফেডারেল স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যতটা কমানো সম্ভব, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে। সেভাবেই ওষুধের ডোজ নির্ধারণ করা উচিৎ।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও